আছে কি তাঁর তৈরি করা দফতর, সরব মনমোহন

তাঁর নীরবতা নিয়ে অভিযোগ উঠত প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়েই। প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানোর পরেও বিশেষ একটা মুখ খোলেননি। অবশেষে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে মুখ খুললেন মনমোহন সিংহ। প্রশ্ন তুললেন যোজনা কমিশন নিয়ে। যে যোজনা কমিশনের অবসান ঘোষণা করে দিয়েছেন তাঁর উত্তরসূরি নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যসভার সদস্য মনমোহন এখন অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৯
Share:

তাঁর নীরবতা নিয়ে অভিযোগ উঠত প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়েই। প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানোর পরেও বিশেষ একটা মুখ খোলেননি। অবশেষে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে মুখ খুললেন মনমোহন সিংহ। প্রশ্ন তুললেন যোজনা কমিশন নিয়ে। যে যোজনা কমিশনের অবসান ঘোষণা করে দিয়েছেন তাঁর উত্তরসূরি নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যসভার সদস্য মনমোহন এখন অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। কংগ্রেসেরই নেতা বীরাপ্পা মইলি যার চেয়ারম্যান। সম্প্রতি এই কমিটির বৈঠকেই মনমোহন প্রশ্ন রাখেন, যোজনা কমিশনের অধীনে যে স্বাধীন মূল্যায়ন দফতর তৈরি হয়েছিল, সেটাও কি তুলে দেওয়া হয়েছে?

Advertisement

হঠাৎ কেন বিশেষ এই দফতরটি নিয়ে মনমোহনের মাথা ব্যথা? প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মনমোহন তাঁর ঘনিষ্ঠ মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ পদে এনেছিলেন। সেই যোজনা কমিশনের অধীনেই তৈরি হয় স্বাধীন মূল্যায়ন দফতর। মনমোহনই এই দফতরের শীর্ষে বসান অর্থনীতিবিদ অজয় ছিব্বেরকে। নিজের হাতে তৈরি বলেই মনমোহন ওই দফতরের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তিত বলে মনে করছেন ওই স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যরা।

স্বাধীন মূল্যায়ন দফতরের দায়িত্ব ছিল, যে সব উন্নয়নমুখী প্রকল্প চলছে, তার পর্যালোচনা করা। বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে কি না, এর কতটা প্রভাব পড়ছে, তাই দেখা। দ্বিতীয় ইউপিএ-সরকারের শুরুতে লোকসভা ও রাজ্যসভার যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় প্রথম এই স্বাধীন মূল্যায়ন দফতর বা ‘ইনডিপেন্ডেন্ট ইভ্যালুয়েশন অফিস’ তৈরির কথা বলা হয়। ২০১০-এ এই দফতর তৈরির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। দফতরটি কাজ শুরু করে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে।

Advertisement

কাজের ক্ষেত্রে পুরোপুরি স্বাধীনতা দেওয়া হলেও যোজনা কমিশনের অভিভাবকত্বেই রাখা হয়েছিল নতুন দফতরটিকে। যদিও দফতরের প্রধান অজয় ছিব্বের সবার আগে যোজনা কমিশনেরই মূল্যায়ন করেন এবং তার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন! মোদী-সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই স্বাধীন মূল্যায়ন দফতর সুপারিশ করে, বর্তমান চেহারায় যোজনা কমিশন ভারতের উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অভিজ্ঞতা বলছে, এত বড় সংস্থার সংস্কার সহজ নয়। তার বদলে যোজনা কমিশন তুলে দিয়ে নতুন সংস্থা তৈরিই ভাল। যারা রাজ্যগুলিকে নতুন ধরনের চিন্তাভাবনার জোগান দিয়ে সাহায্য করবে। সংস্কারের পথে দীর্ঘমেয়াদি উপায় বাতলাবে।

যোজনা কমিশনের কর্তারা সে সময় বলেছিলেন, মোদীর ভাবনাচিন্তার সঙ্গে তাল রেখেই অজয় ছিব্বের ওই সুপারিশ করেছিলেন। স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে মোদী যোজনা কমিশনের অবসানের কথা ঘোষণা করেন। নিজের পদ বাঁচাতে পারেননি অজয়। মনমোহনের আমলে দায়িত্ব পাওয়া রাজ্যপালদের মতোই বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় মনমোহন সরকারের বাছাই করা ব্যক্তিদেরও সরিয়ে নতুন নিয়োগ করেছে নয়া সরকার। গত ২৯ অগস্ট এক নির্দেশে এক মাসের বেতন দিয়ে অজয়কে স্বাধীন মূল্যায়ন দফতরের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্মানজনক ভাবে নিজে থেকে সরে দাঁড়ানোরও সময়টুকুও পাননি অজয়।

মনমোহনের প্রশ্নের উত্তরে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, দফতরটি এখনও উঠে যায়নি। তাঁর প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই পদে নতুন কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। যোজনা দফতরের এক কর্তার কথায়, “যোজনা কমিশনেরই তো সমাপ্তি ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষা। যোজনা কমিশন উঠে গেলে তাঁর অধীনস্থ স্বাধীন মূল্যায়ন দফতরও উঠে যাবে। যোজনা কমিশনের বদলে যে নতুন সংস্থা তৈরি হবে, সেখানে মনমোহনের মস্তিষ্কপ্রসূত দফতরের কোনও ছায়া দেখা যায় কি না, সেটা সময়ই বলবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement