জীবনের সংজ্ঞা খুঁজতে আধ্যাত্মিকতার সঙ্গ নিয়েছিলেন। সংসার ধর্ম ছেড়ে সন্ন্যাসীর জীবন কাটাচ্ছিলেন। টানা ১২ বছর এ ভাবে থাকার পর তাঁর উপলব্ধি, আধ্যাত্মিক জীবন কখনও সন্ন্যাসী হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না।
১২ বছর পর ফের ফেলে আসা জীবনের হাত ধরলেন। কিন্তু তত দিনে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছিল। এই সমাজও তাঁকে ভুলতে বসেছিল। এ জীবন তখন তাঁর কাছে আরও কঠিন। নতুন করে বেঁচে থাকার লড়াই শুরু করলেন তিনি।
তাঁর নাম পরেশ রাওয়াল। তিনি এখন বহু পরিচিত মুখ নেটমাধ্যমের পাতায়। ১২ বছর সন্ন্যাসী হয়ে থাকার সময় জীবনমুখী যে সমস্ত শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেছিলেন, সেগুলো কাজে লাগিয়েই আজ তিনি জনপ্রিয় ‘স্পিরিচুয়াল লাইফ কোচ’।
সংসারের মায়া কাটিয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করা পরেশ আবার ১২ বছর পর সংসারে ফিরে ডেটিং অ্যাপেও ঢুঁ মারতে শুরু করেছিলেন!
এই ডেটিং অ্যাপ থেকেই জীবনসঙ্গী খুঁজে পেয়েছেন তিনি। তাঁর আধ্যাত্মিক জীবন সম্পর্কে সমস্ত কিছু জেনেই পরেশকে বিয়ে করেছেন বার্নাডেট্টে নামে ওই মহিলা।
২০২০ সাল। পরেশের বয়স তখন ২১ বছর। এই বয়সে সকলেই নিজের কর্মজীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কর্মজীবনকে মসৃণ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। কিন্তু পরেশ সে সব নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। তিনি বরং জীবনের অর্থ খুঁজতেই সময় ব্যয় করতেন।
সেবামূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন তিনি। সমাজের কাজেই নিজের জীবন উৎসর্গ করতে চাইতেন। সংসারের বেড়াজালের মধ্যে থাকতে মন চাইল না কিছুতেই। সব কিছু ছেড়ে তিনি চলে যান। পিছনে ফেলে যান মা-বাবা, আত্মীয়, বন্ধুদের।
২০০২ সালে একটি বৈষ্ণব সংগঠনে যোগ দেন তিনি। ১২ বছর সেখানেই ছিলেন। সেখানেই আধ্যাত্মিকতার পাঠ নিতেন এবং বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করতেন।
কিন্তু একটি বিষয় তিনি মানতে পারতেন না। আধ্যাত্মিকতা এবং ধর্মকে এক সূত্রে গেঁথে ফেলা। তাঁর কাছে আধ্যাত্মিকতা ছিল সমস্ত কিছুর উর্ধ্বে। অথচ ওই সংগঠনে আধ্যাত্মিকতা এবং ধর্মীয় চর্চাকে এক হিসাবেই দেখানো হত।
আধ্যাত্মিকতার কোনও সীমানা হয় না। কিন্তু ওই সংগঠনে আধ্যাত্মিকতার প্রশিক্ষণ ছিল সীমাবদ্ধ, এ বিষয়টিই পছন্দ হচ্ছিল না তাঁর। যে আধ্যাত্মিকতার জন্য তিনি সংসার ছেড়েছিলেন ১২ বছর পর সেই আধ্যাত্মিকতার টানেই ফের সংসারে ফিরে আসেন পরেশ।
তিনি বুঝেছিলেন সংসারে থেকেও আধ্যাত্মিকতার চর্চা করা সম্ভব। কিন্তু যাওয়া যতটা সহজ ছিল ফিরে আসা সেটা ছিল না। এই ১২ বছরে আমূল বদল হয়ে গিয়েছিল সমাজের। মাল্টিপ্লেক্স কী জানতেন না পরেশ। তাঁর বাড়ির লোকজনের কাছেও তিনি নতুন লোক ছিলেন। আর প্রতিবেশীরা তো তাঁকে ভুলতেই বসেছিলেন।
তাঁর কাছে প্যান কার্ড কিংবা এ জাতীয় কোনও সরকারি পরিচয়পত্র ছিল না। শৈশবের সমস্ত বন্ধুরাই চাকরি করছিলেন। তাঁদের নিজেদের পরিবার নিয়ে সুখীও ছিলেন। আধ্যাত্মিকতাকে সঙ্গে নিয়ে ফের নতুন লড়াই শুরু করেন পরেশ।
প্রথমে নিজের পরিচয় ফিরে পাওয়ার লড়াই। পাবলিক পলিশি-তে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে তিনি।
চাকরির খোঁজ শুরু করেন। প্রথমে কলকাতার একটি এইচআর ফার্মে কাজ পান। তারপর বেশ কিছু স্টার্ট আপ ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। ভারতীয় রেলওয়ের পাবলিক পলিশি বিভাগেও কাজ করেছেন। কিন্তু কোনও কাজই তাঁর মনমতো হচ্ছিল না। তখন বিভিন্ন ডেটিং অ্যাপেও নিত্য যাতায়াত শুরু করেন তিনি। সেখানেই স্ত্রী বার্নাডেট্টের সঙ্গে তাঁর পরিচয়।
পরেশ এখন স্পিরিচুয়াল লাইফ কোচ। নেটমাধ্যমের পাতায় জীবনমুখী প্রচুর ভাষণ রয়েছে তাঁর। বাকি জীবন এ ভাবে আধ্যাত্মিকতা নিয়েই কাটাতে চান তিনি।