Ashok Lavasa

Pegasus Spyware: আড়ি পাতার ফাঁদে নাম লাভাসারও

পেগাসাস প্রোজেক্টের রিপোর্ট সামনে আসার পরে দেখা যাচ্ছে, সাংবিধানিক পদে আসীন হওয়া সত্ত্বেও লাভাসা ছাড় পাননি আড়ি পাতার ফাঁদ থেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২১ ০৬:৩০
Share:

অশোক লাভাসা। ফাইল চিত্র।

ফোনে আড়ি পেতে নজরদারির নিশানায় ছিলেন প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসাও।

Advertisement

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের বিরুদ্ধে একের পর এক নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময়ের তিন জন নির্বাচন কমিশনারের অন্যতম ছিলেন লাভাসা। অন্য দু’জন কমিশনার মোদী-শাহকে ক্লিনচিট দিলেও লাভাসা ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন। পেগাসাস প্রোজেক্টের রিপোর্ট সামনে আসার পরে দেখা যাচ্ছে, সাংবিধানিক পদে আসীন হওয়া সত্ত্বেও লাভাসা ছাড় পাননি আড়ি পাতার ফাঁদ থেকে। ইজ়রায়েলের পেগাসাস স্পাইওয়্যার তাঁর ফোনে ঢোকানো হয়েছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে ইজ়রায়েলি সংস্থার তথ্যভান্ডার থেকে ফাঁস হওয়া তালিকায় তাঁর ফোন নম্বরও রয়েছে।

গত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে মোদী ও তৎকালীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল বিরোধী দলগুলি। কিন্তু একটি ঘটনাতেও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি কমিশনকে। মোদীর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল, তিনি পুলওয়ামাতে জঙ্গি হামলায় নিহত ৪৪ জন আধাসেনার নামে দেশের তরুণ সমাজের ভোট চেয়েছিলেন। সেই সময়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ছিলেন সুনীল অরোড়া। অন্য দুই নির্বাচন কমিশনার ছিলেন অশোক লাভাসা এবং সুশীল চন্দ্র। তাঁদের উপরে মূলত দায়িত্ব ছিল ওই অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার।

Advertisement

সূত্রের মতে, অন্তত পাঁচটি ক্ষেত্রে লাভাসার সঙ্গে মতপার্থক্য হয়েছিল বাকি দুই নির্বাচন কমিশনারের। এর মধ্যে আচরণবিধি ভাঙার চারটি অভিযোগ ছিল খোদ মোদীর বিরুদ্ধে। সুনীল ও সুশীল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কোনও দোষ খুঁজে পাননি। কিন্তু ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন লাভাসা। অমিত শাহের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের রিপোর্টেও লাভাসা অন্য দু’জনের সঙ্গে সহমত হননি। তিন কমিশনারের মধ্যে মাত্র এক জন ভিন্নমত পোষণ করায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সব ক’টি ক্ষেত্রেই ছাড় পেয়ে যান মোদী-শাহ। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেই লাভাসার স্ত্রী, ছেলে ও বোনের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির অভিযোগ আনে আয়কর দফতর। বৈদেশিক মুদ্রা আইন ভাঙার অভিযোগে ছেলে আবিরের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। অভিযোগ ওঠে হেনস্থারও। দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হওয়ার সুযোগ থাকলেও সময়ের আগেই কমিশন ছেড়ে দিয়ে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কে যোগ দেন লাভাসা। এ দিকে চলতি বছরে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে অবসর নেন সুনীল অরোড়া। লোকসভা নির্বাচনের সময়ে যিনি তিন কমিশনারের মধ্যে পদমর্যাদায় তৃতীয় ছিলেন, সেই সুশীল চন্দ্র বর্তমানে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার।

পেগাসাস প্রোজেক্ট অনুযায়ী, ভারতে যে ৩০০ ফোনে নজরদারি চালানো হয়েছিল, সেই তালিকায় লোকসভা নির্বাচনের সময়ে লাভাসার ব্যবহৃত ফোনের নম্বরটিও রয়েছে। সূত্রের বক্তব্য, লাভাসা মোদী-শাহের আচরণবিধি ভাঙা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করার পরেই তাঁর ফোন নম্বরটি নজরদারি-তালিকায় চলে আসে বলে দেখা গিয়েছে। তবে ফোনের সম্পূর্ণ ফরেন্সিক বিশ্লেষণ না-করা পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়, সেটিতে সত্যিই সফল ভাবে আড়ি পাতা সম্ভব হয়েছিল কি না। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে লাভাসা মুখ খুলতে চাননি। কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক সংস্থা। নির্বাচনে যাতে স্বচ্ছতা থাকে, সেই কারণেই সরাসরি ওই সংস্থাকে সরকারের অধীনে রাখা হয়নি। কিন্তু যে ভাবে বিরুদ্ধমত পোষণ করার কারণে নির্বাচন কমিশনারের উপর নজরদারি চালানো হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট, মোদী সরকার সব কিছুতেই নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ চায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement