Kolkata Doctor Rape-Murder Case

আরজি কর-কাণ্ডে এ বার মুখ খুললেন হরভজন সিংহ, খোলা চিঠি দিলেন মমতার সরকার এবং সিবিআইকে

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ বার মুখ খুললেন হরভজন সিংহ। রাজ্য সরকার এবং সিবিআইয়ের উদ্দেশে রবিবার একটি খোলা চিঠি লিখেছেন তিনি। চিকিৎসকদের আন্দোলনের প্রতি তাঁর সমর্থনের কথাও বলেছেন হরভজন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৪ ১৫:৫৬
Share:

(বাঁ দিকে) হরভজন সিংহ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আরজি কর-কাণ্ডে এ বার সরব প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা আম আদমি পার্টির সাংসদ হরভজন সিংহ। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলার সরকার, সিবিআই এবং সমগ্র দেশবাসীর উদ্দেশে রবিবার খোলা চিঠি লিখেছেন তিনি। তাঁর মতে, আরজি কর হাসপাতালের ঘটনা শুধু একটি ‘জঘন্য অপরাধ’ই নয়, এটি সমাজের প্রত্যেক মহিলার সম্মান ও নিরাপত্তার উপর আঘাত। তিনি লিখেছেন, “এই ঘটনা আরও স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছে যত দ্রুত সম্ভব কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ এবং একটি পদ্ধতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে।”

Advertisement

আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সাংসদের মতে, “চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এমনিতেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করেন। এর মধ্যে যদি তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হয়, তবে আমরা কী ভাবে আশা করব তাঁরা কাজের সময় নিজেদের পুরোটা সঁপে দেবেন?” চিকিৎসকেরা যে প্রতিবাদ ও আন্দোলন চালাচ্ছেন, তাতেও পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন হরভজন। তিনি লিখেছেন, “এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তাই চিকিৎসকেরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন।” এমন অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং সিবিআইয়ের কাছে তাঁর আর্জি, ন্যায়বিচারের পথ নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ করা হোক।

দু’পাতার ওই খোলা চিঠি এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে শেয়ার করে হরভজন লিখেছেন, “কলকাতায় ধর্ষণ ও খুনের মামলায় বিচারে দেরি হওয়া খুবই বেদনাদায়ক।” পোস্টটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকেও ট্যাগ করেছেন তিনি। আপ সাংসদের কথায়, “মহিলাদের নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে কোনও আপস করা যাবে না। যাঁরা এই নৃশংস অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যাতে এমন ঘটনা আগামী সময়ে আর না ঘটে। এমন একটি সমাজ গড়তে হবে, যেখানে মহিলারা নিরাপদ অনুভব করবেন। একমাত্র তা হলেই সমাজের আস্থা ফেরানো যাবে।”

Advertisement

যদিও ওই খোলা চিঠিতে হরভজন এটাও স্পষ্ট করেছেন, তাঁর বার্তা শুধু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্দেশে নয়। মহিলাদের উপর ধর্ষণ ও অত্যাচারের ঘটনা যে সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে প্রায় নিত্যদিনই দেখা ও শোনা যায়, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। এই ধরনের ঘটনাগুলি বন্ধ করতে প্রতিটি সরকারকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে বলে মনে করছেন তিনি। কী কী করা প্রয়োজন, তার একটি প্রস্তাবও দিয়েছেন আপ সাংসদ। হরভজনের মতে, হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যাঁরা এই ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকে যাতে একটি নিরাপদ কর্মস্থল পান, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। চিকিৎসাকেন্দ্রে কী ভাবে নিরাপত্তায় এমন গলদ থাকতে পারে, সেটিও তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলে মত হরভজনের। তিনি লিখেছেন, “প্রশাসনকে এর দায় নিতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন গলদ আর না থাকে, তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে।”

প্রসঙ্গত, আরজি করে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় কলকাতা পুলিশ এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। পরে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে গিয়েছে। তবে নতুন করে এখনও পর্যন্ত কোনও গ্রেফতারি হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, দোষীর ফাঁসির সাজা নিশ্চিত করতে হবে। সিবিআইয়ের উপর চাপ বাড়াতে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তাতেও নেমেছেন মমতা। এরই মধ্যে আপ সাংসদ হরভজন খোলা চিঠি লিখলেন রাজ্য সরকার এবং সিবিআইয়ের উদ্দেশে।

আরজি কর-কাণ্ডে এর আগেই ‘ইন্ডিয়া’র অন্যান্য নেতারা মুখ খুলেছেন। লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, “যে নৃশংস অত্যাচার চলেছে, তাতে চিকিৎসক ও নারীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ স্পষ্ট।” তিনি আরও লিখেছিলেন, “ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করে অভিযুক্তকে বাঁচানোর চেষ্টা হাসপাতাল ও স্থানীয় প্রশাসন সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।” মমতাও কংগ্রেসের উদ্দেশে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে ধর্ষণের ঘটনায় সুবিচার নিশ্চিত করতে কী পদক্ষেপ করেছে সেখানকার সরকার। সমাজবাদী পার্টির তরফে অখিলেশ যাদবও মুখ খুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, আরজি করের ঘটনা নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেছিলেন, “মমতা নিজে একজন মহিলা। মহিলাদের কষ্ট তিনি বোঝেন। যা যা দাবি উঠেছিল, তিনি সেই মতো পদক্ষেপও করেছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement