তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়কে তলব করল লালবাজার। তাঁকে বেশ কিছু বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে খবর। রবিবার বিকেলের মধ্যেই তাঁকে কলকাতা পুলিশের সদর দফতরে হাজিরা দিতে হবে।
কেন তলব সুখেন্দুকে? লালবাজার জানিয়েছে, সমাজমাধ্যমে ‘ভুল তথ্য’ পরিবেশন করেছেন সুখেন্দু। সেই কারণেই এই তলব। একটি পোস্টে তিনি দাবি করেছেন, আরজি করের ঘটনার তিন দিন পর ডগ স্কোয়াড গিয়েছিল হাসপাতালে। কেন এই বিলম্ব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সুখেন্দু। পুলিশের দাবি, এই তথ্য ভুল। ডগ স্কোয়াড নিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে আদৌ দেরি করা হয়নি। সে বিষয়েই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে রবিবার বিকেলে।
সম্প্রতি আরজি করের ঘটনা নিয়ে সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন কথা বলেছেন সুখেন্দু। শনিবার রাতে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তিনি কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে সিবিআই হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়েছেন। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকেও হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি। ওই পোস্টেই ডগ স্কোয়াড নিয়ে বক্তব্য জানিয়েছেন।
পোস্টে সুখেন্দু লিখেছেন, ‘‘সিবিআইকে স্বচ্ছ ভাবে তদন্ত করতে হবে। কে বা কারা, কেন আত্মহত্যার তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা করেছিল, তা জানার জন্য আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। কেন সেমিনার হলের কাছে ঘরের দেওয়াল ভেঙে ফেলা হল? কার প্রশ্রয়ে ‘রায়’ এত ক্ষমতা পেল? কেন ঘটনার তিন দিন পর স্নিফার ডগ ব্যবহার করা হল? এমন বহু প্রশ্ন উঠে এসেছে। এর উত্তর দিতে হবে ওঁদের।’’ এই পোস্টের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডাকা হল সুখেন্দুকে।
গত ৯ অগস্ট সকালে আরজি করের সেমিনার হলে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়।লালবাজারের বক্তব্য, সে দিনই হাসপাতালে স্নিফার ডগ নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। তল্লাশি চালানো হয়েছিল। ডগ স্কোয়াড হাসপাতালে গিয়েছিল দু’দিন। ৯ তারিখের পর আবার ১২ অগস্ট পুলিশ-কুকুর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ঘটনাস্থলে। সুখেন্দুর এই ভুয়ো তথ্য প্রচারের কারণেই লালবাজারে তাঁকে তলব করা হয়েছে। এই ধরনের তথ্য সুখেন্দু কোথায় পেলেন? কেন তা পোস্ট করলেন? জিজ্ঞাসা করা হতে পারে তৃণমূল সাংসদকে।
আরজি করের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে সমাজমাধ্যমে এ বিষয়ে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। যা নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি জানিয়েছে পুলিশ। সাংবাদিক সম্মেলনেও সিপি জানান, ভুয়ো এবং ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার বন্ধ না করলে পুলিশ আইনি পদক্ষেপ করবে।
সুখেন্দুর পোস্টের বিরোধিতা করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও। তিনি পাল্টা পোস্টে জানিয়েছেন, আরজি কর-কাণ্ডের সুবিচার তিনিও চান। তবে সিপিকে হেফাজতে নেওয়ার দাবির বিরোধিতা করছেন তিনি। কারণ, পুলিশ প্রথম থেকে স্বচ্ছ ভাবে সঠিক পথে তদন্ত করেছে। সুখেন্দুর এই পোস্ট দুর্ভাগ্যজনক বলেও মন্তব্য করেন কুণাল।
প্রসঙ্গত, রবিবার বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কেও তলব করেছে লালবাজার। তাঁর বিরুদ্ধে আরজি করের নির্যাতিতার নাম-পরিচয় প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে, যা আইনবিরুদ্ধ। একই অভিযোগে দু’জন চিকিৎসককেও ডেকেছে লালবাজার। আরজি করে গত ১৪ অগস্ট রাতে মেয়েদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য় তলব করা হয়েছে বাম যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কেও।