দীপেন্দ্র সিংহ হুডা। —ফাইল চিত্র।
সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে ক্রমাগত হইচই করা উচিত নয় বলে মনে করেন প্রাক্তন সেনাকর্তা দীপেন্দ্র সিংহ হুডা। তাঁর মন্তব্যকে হাতিয়ার করে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে ফের নিশানা করেছে কংগ্রেস।
২০১৬ সালে কাশ্মীরের উরি এলাকায় সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হানায় নিহত হন ১৯ জন সেনা। তার পরেই পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে বেশ কয়েকটি জঙ্গি লঞ্চপ্যাডে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ চালায় ভারতীয় সেনা। নর্দার্ন কম্যান্ডের প্রাক্তন প্রধান হিসেবে সেই অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুডা। ওই অভিযান নিয়ে শোরগোল হয়েছিল দেশে। জানুয়ারি মাসে এ নিয়ে তৈরি একটি ছবিও মুক্তি পাবে।
গত কাল চণ্ডীগড়ে এক আলোচনাসভায় হুডা বলেন, ‘‘সার্জিকাল স্ট্রাইকের ঠিক পরেই দেশে তা নিয়ে হইচই হওয়া স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে হইচই চলা বাঞ্ছনীয় নয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘তখন ওই অভিযানের প্রয়োজন ছিল। তাই সেনা পদক্ষেপ করেছিল। তা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত হয়েছে কি না সেই প্রশ্নের জবাব রাজনীতিকেরাই দিতে পারবেন।’’
হুডার মতে, ‘‘এখন মনে হয় সার্জিকাল স্ট্রাইককে গোপন রাখতে পারলেই ভাল হত। কিন্তু উরি হামলার পরে আমরা কী পদক্ষেপ করছি তা নিয়ে বিপুল আগ্রহ ছিল। তাই অভিযানের কথা পুরোপুরি গোপন রাখা সম্ভব হয়নি।’’ প্রাক্তন সেনাকর্তার বক্তব্য, ‘‘উরি হামলার পরে পাকিস্তানের সঙ্গে গোলন্দাজ বাহিনীর বড় সংঘর্ষ হয়েছিল। কিন্তু সার্জিকাল স্ট্রাইকের মাধ্যমে যে কাজ করা হয়েছে তা গোলন্দাজ বাহিনীর হামলায় করা সম্ভব ছিল না।’’
হুডার বক্তব্য, ‘‘২০১৩ সালের পর থেকেই জঙ্গিরা সাম্বা, হিরানগর, পঠানকোট, উরির মতো এলাকায় সেনা ছাউনিকে নিশানা করা শুরু করে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘উরির সেনা ছাউনিতে হামলার পরে তৎকালীন সেনাপ্রধানের সঙ্গে আমিও সেখানে গিয়েছিলাম। তিন ইঞ্চি ছাইয়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আমাদের মনে কোনও সন্দেহ ছিল না যে এ বার কিছু একটা পদক্ষেপ করতে হবে। আর তা হবে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে হামলা।’’ হুডার দাবি, এই হামলার ফলে পাকিস্তানি সেনা ঘাবড়ে গিয়েছিল। সার্জিকাল স্ট্রাইককে রাজনীতির ময়দানে হাতিয়ার করা নিয়ে বেশ কয়েক বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কড়া সমালোচনা করেছেন রাহুল গাঁধী। আজ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হু়ডার মন্তব্যের পরে টুইটারে রাহুল বলেন, ‘‘আপনি প্রকৃত সৈনিকের মতো কথা বলেছেন। দেশ আপনাকে নিয়ে গর্বিত। সেনাবাহিনীকে ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করতে মিস্টার ৩৬-এর লজ্জা করে না। উনি এক দিকে সামরিক অভিযানকে রাজনৈতিক পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অন্য দিকে রাফাল চুক্তির মাধ্যমে অনিল অম্বানীর পুঁজি ৩০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন।’’
সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়তের বক্তব্য, ‘‘এটা লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুডার ব্যক্তিগত মত। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। তবে ওই অভিযানে উনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাই আমার কাছে ওঁর বক্তব্যের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে।’’