বিতর্কও কুড়িয়েছিলেন প্রয়াত ‘সুপার কপ’ গিল

হৃদ্‌রোগ ও কিডনির সমস্যা নিয়ে ১৮ মে থেকে দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন গিল। আজ দুপুর তিনটে নাগাদ হদ‌্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৮২।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৭ ০৩:৪৬
Share:

কে পি এস গিল। ছবি: সংগৃহীত।

অশান্ত পঞ্জাবে উগ্রপন্থীদের নিকেশ করতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন। আবার তিনিই টানা ১৪ বছর ছিলেন সর্বভারতীয় হকি সংস্থার প্রধান। পদ্মশ্রীও পেয়েছিলেন। কিন্তু বিতর্ক এক মুহূর্তও পিছু ছাড়েনি তাঁর। পঞ্জাবের সেই ‘সুপার কপ’ কে পি এস গিল আজ মারা গেলেন।

Advertisement

হৃদ্‌রোগ ও কিডনির সমস্যা নিয়ে ১৮ মে থেকে দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন গিল। আজ দুপুর তিনটে নাগাদ হদ‌্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৮২। ১৯৫৮ ব্যাচের আইপিএস গিল অসম-মেঘালয় মিলিয়ে টানা ২৮ বছর ছিলেন উত্তর-পূর্ব ভারতে। ১৯৮৪-তে বদলি হন রাজ্য পঞ্জাবে। প্রথম দফায় ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ এবং পরে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত পঞ্জাব পুলিশের ডিজি ছিলেন তিনি।

আটের দশকে পঞ্জাব জুড়ে তখন উগ্রপন্থা চরমে। সেই সময়ে এক দিকে পঞ্জাবের রাজ্যপাল সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, অন্য দিকে দুই পুলিশকর্তা জুলিও রিবেরো এবং কে পি এস গিল কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে কোমর ভেঙে দিয়েছিলেন জঙ্গিদের। কর্মপদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও। কিন্তু গিলের দাওয়াই কাজে আসায় অবসরের দিন পর্যন্ত রাজ্য পুলিশের শীর্ষ পদ থেকে সরানো হয়নি তাঁকে। ১৯৮৪-র ‘অপারেশন ব্লু স্টার’-এর পরেও অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে ফের ঘাঁটি গেড়েছিল খলিস্তানি জঙ্গিরা। ১৯৮৬-এ ‘অপারেশন ব্ল্যাক থান্ডার’ চালিয়ে ৩০০ জঙ্গিকে গ্রেফতারও করে এনএসজি-বিএসএফ। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। ১৯৮৮-র ৯ মে থেকে গিলের নেতৃত্বে শুরু হয় ‘দ্বিতীয় অপারেশন ব্ল্যাক থান্ডার।’ স্বর্ণ মন্দির কার্যত অবরুদ্ধ রেখে জঙ্গিদের কাছে রসদ পৌঁছনোর পথ বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সংঘর্ষে ৪৩ জন উগ্রপন্থীর মৃত্যু হয়, আত্মসমর্পণ করে ৬৭ জন। সেনার ‘ব্লু স্টার’-এর চেয়ে গিলের ‘ব্ল্যাক থান্ডার’-এ মন্দির চত্বরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল অনেক কম। গিল পরে বলেছিলেন, সেনা অভিযানের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি হতে দিতে চাননি তিনি।

Advertisement

বৈঠক: সময়টা আটের দশকের মাঝামাঝি। রাজীব গাঁধী, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ও জুলিও রিবেরোর সঙ্গে এক টেবিলে কে পি এস গিল। —ফাইল চিত্র।

বলা হয়, এই অভিযানই পঞ্জাবে খলিস্তানিদের দাপট শেষ করে দেয়। ১৯৯১-এ পঞ্জাবে উগ্রপন্থার বলি হন প্রায় ৫০০০ মানুষ। গিল দায়িত্ব নেওয়ার পরে ১৯৯৩-এ সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৫০০-তে। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও সাফল্য কম নয়। ১৯৯৮-এ গিলের আমলেই ব্যাঙ্কক এশিয়াডে হকিতে সোনা জেতে ভারত।

আরও পড়ুন:জবাই করতে কেনাবেচা নয় গবাদি পশু, জানাল কেন্দ্র

গিলের জীবনে সম্ভবত সবচেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায়টা আসে নয়ের দশকের শেষে। পঞ্জাবের মহিলা আইএএস অফিসার রূপান দেওল বজাজের শ্লীলতাহানির দায়ে গিলকে দোষী সাব্যস্ত করে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট। অভিযোগ, ডিজি থাকার সময়েই ১৯৮৮-এ এক পার্টিতে রূপানের শরীরের পিছনে চাপড় মেরেছিলেন গিল। শোরগোল ফেলে দিয়েছিল এই মামলা। ২০০৫-এ সুপ্রিম কোর্টও গিলের বিরুদ্ধে রায় দেয়। পাঁচ মাসের জেল ও ২ লক্ষ টাকা জরিমানা হয় গিলের। তবে কারাদণ্ড মকুব হয়ে যায়। আজ গিলের প্রয়াণের পরে দিনভর রূপানের প্রতিক্রিয়ার খোঁজ করেছে সংবাদমাধ্যম। নীরবই থেকেছেন রূপান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement