অসমে ব্রহ্মপুত্রের চরে গাছ লাগাচ্ছেন যাদব পায়েং। ফাইল চিত্র।
দশরথ মাঝির কথা মনে আছে? যিনি একা হাতেই পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়ে ফেলেছিলেন। পরবর্তীকালে যিনি ‘মাউন্টেন ম্যান’ নামে খ্যাত হয়েছেন।
আরও এক ‘দশরথ মাঝি’ রয়েছেন এ দেশেই। না, তিনি কোনও পাহাড় কাটেননি। তবে অনুর্বর জায়গাকে গত ৪০ বছর ধরে একটু একটু করে সবুজে ভরিয়ে তুলেছেন। সৃষ্টি করেছেন বিশাল অরণ্য। তিনি আর কেউ নন, অসমের বাসিন্দা যাদব পায়েং। গোটা দেশ তাঁকে এখন ‘ফরেস্ট ম্যান অব ইন্ডিয়া’ নামেই চেনে।
সাল ১৯৭৯। যাদবের বয়স তখন ১৬। মাজুলি দ্বীপ ছিল তাঁর ঘুরে বেড়ানোর জায়গা। ওই দ্বীপের প্রতি তাঁর একটা অদ্ভুত আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল। একটা কষ্টও তাঁকে কুড়ে কুড়ে খেত। যাদব এক দিন দেখেন বহু সাপ মরে পড়ে আছে মাজুলি দ্বীপে। গাছপালাহীন সেই দ্বীপে আশ্রয়ের উৎকৃষ্ট স্থান পেয়ে মারা পড়ত ছোট ছোট বহু জীব।
যাদব এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সেই দৃশ্য দেখে খুব কষ্ট হয়েছিল। শিউরে উঠেছিলাম।” যাবদ জানান, তার পরই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন যে ভাবেই হোক এই দ্বীপের প্রাণিগুলিকে বাঁচাতে হবে। সেই থেকে শুরু দ্বীপকে সবুজে ভরিয়ে তোলার কাজ শুরু করেছেন তিনি।
একা হাতেই গাছ লাগিয়ে চলেছেন ‘ফরেস্ট ম্যান অব ইন্ডিয়া’।
না, কাজটা খুব একটা সহজ ছিল না তাঁর কাছে। ১৩৬০ একর জমিতে গাছ লাগানো এবং সেগুলোর দেখভাল করা কম শ্রমসাধ্য নয়। কিন্তু যাদব যেন ধনুকভাঙা পণ করে বসেছিলেন। তার উপর বালিতে গাছ বাঁচানোও ছিল একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। তবে হাল ছাড়েননি। শুরু করেছিলেন বাঁশগাছ পুঁতে। তার পর এক এক করে প্রতি দিন নানা ধরনের গাছ লাগাতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, সেগুলোকে নিয়মিত পরিচর্যাও করতেন যাদব।
সেই মাজুলি দ্বীপের গাছগুলি মহীরুহে পরিণত হয়েছে। বিশাল অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে নানা রকম জীব নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায়। এ কাজের জন্য ২০১৫-তে পদ্মশ্রী পেয়েছেন যাদব। যাদব এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ছোট ছোট প্রাণীদের ওইভাবে মারা যেতে দেখে খুব কষ্ট হতো। মনে হত মানুষও যদি এ ভাবে মারা যায়! তার পরই গাছ লাগানো শুরু করি।’’ এই সবুজ দ্বীপের প্রকৃত রাজা তো যাদবই!