রোনা উইলসন। ফাইল চিত্র
নয়া মোড় নিল ভীমা-কোরেগাঁও মামলা। আমেরিকার সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর মতে, ওই মামলায় ‘মূল প্রমাণ’ হিসাবে যা তুলে ধরা হচ্ছে তা বাইরে থেকে ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে এক অভিযুক্তের ল্যাপটপে ঢুকিয়ে দিয়েছিল হ্যাকার। নতুন করে ফরেনসিক পরীক্ষায় এই বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে বলে ওই সংবাদপত্রের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ওই মামলায় ধৃতদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্র, সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ওই মামলার শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলছিলেন সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ। ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর দাবি সেই সন্দেহ আরও জোরদার করে তুলল বলেই মনে করা হচ্ছে।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্ত সমাজকর্মী রোনা উইলসনের ল্যাপটপে ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে অন্তত ১০টি চিঠি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যা রোনার বিরুদ্ধে ‘প্রমাণ’ হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে ‘আর্সেনাল কনসাল্টিং’ নামে একটি ডিজিটাল ফরেনসিক সংস্থার পরীক্ষায় এই বিস্ফোরক তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
ওই ডিজিটাল ফরেনসিক সংস্থার রিপোর্ট বুধবার বম্বে হাইকোর্টে পেশ করেছেন রোনার আইনজীবী সুদীপ পাসবোলা। ভীমা-কোরেগাঁও মামলার সময় মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন দেবেন্দ্র ফড়ণবীস। এ বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি এই বিষয়টি নিয়ে বিশেষ কিছু জানি না। তবে শহুরে নকশালদের যোগ নিয়ে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এই প্রমাণের জন্যই সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত অভিযুক্তদের দু’বার জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। বিষয়টি বিচারাধীন, তাই বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না।’’
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ওই চিঠিগুলিকে প্রাথমিক প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরে ভিত্তিতেই রোনাকে গ্রেফতার করেছিল পুণের পুলিশ এবং তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিটও পেশ হয়েছিল। পরে ওই মামলার তদন্তভার নেয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-ও। তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ‘এলগার পরিষদ’-এর অনুষ্ঠানে উত্তেজক ভাষণ দিয়েছিলেন রোনা ছাড়াও, গৌতম নওলখা, আনন্দ তেলতুম্বডে-সহ কয়েক জন। যার জেরে পরের দিন পুণের ভীমা-কোরেগাঁও-তে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। ওই মামলায় জেলবন্দি ৮২ বছরের মিশনারি স্টান স্বামী-ও।
তৃতীয় ইঙ্গ-মরাঠা যুদ্ধে পেশোয়াদের পরাজয় উপলক্ষে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি ভীমা-কোরেগাঁওয়ে বিজয় স্তম্ভে দলিত মানুষ জড়ো হন। ১৮১৮ সালে এই দিনেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পেশোয়া শক্তিকে পরাজিত করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সাহায্য করেছিল দলিত ‘মাহার’ জনগোষ্ঠী। তাই ওই দিনটিকে তাঁরা ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করেন তখন থেকেই। ২০১৮-র প্রথম দিনে ওই হিংসায় মাওবাদী যোগ রয়েছে বলেও তদন্তকারীদের অভিযোগ।