এস জয়শঙ্কর এবং ওয়াং ই— ফাইল চিত্র।
লাদাখ পরিস্থিতি নিয়ে এ বার চিনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সাউথ ব্লকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, চিনা বিদেশমন্ত্রী তথা স্টেট কমিশনার ওয়াং ই-র সঙ্গে মস্কোয় বৈঠক হতে পারে তাঁর। সাংহাই কো-অপারেশনের সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী সপ্তাহে মস্কো যাচ্ছেন জয়শঙ্কর। তখনই দুই বিদেশমন্ত্রীর মুখোমুখি বৈঠক হতে পারে।
লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা কমানোর উদ্দেশ্যে গত বৃহস্পতিবার মস্কোয় চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফংহ-র সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। প্রায় আড়াই ঘণ্টার সেই বৈঠক তেমন ফলপ্রসূ হয়নি বলেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর। তবে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এর মধ্যে আশার কথা, প্রকাশ্যে চড়া সুর বজায় রাখলেও দু’পক্ষই আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে। সেই সূত্র মেনেই এ বার বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হতে পারে।
লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) পেরিয়ে চিনা ফৌজের ঢুকে পড়ার ঘটনা নিয়ে প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে নয়াদিল্লি-বেজিং টানাপড়েন চলেছে। এমন আবহে এই প্রথম দু’দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয় বৃহস্পতিবার। সাংহাই কো-অপারেশনের সম্মেলনে যোগ দিতে তিন দিনের রাশিয়া সফরে গিয়ে গতকাল ওয়েইয়ের সঙ্গে পার্শ্ববৈঠক করেন রাজনাথ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, বৈঠকে রাজনাথ শান্তি ফেরাতে এলএসি থেকে ‘পুরোপুরি সেনা পিছনো’ ( টোটাল ডিসএনগেজমেন্ট) এবং ‘সেনা সংখ্যা কমানো’ (ডিএসক্যালেশন)-র প্রস্তাব দেন। কিন্তু চিনের তরফে প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণে ‘স্থিতাবস্থা’ ফেরানোর বিষয়টি নিয়েই আগ্রহ প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন: ‘নতুন নিয়োগে বাধা নেই’, সার্কুলার-বিতর্কে সাফাই কেন্দ্রের
এই আবহে আগামী সপ্তাহে ওয়াং-জয়শঙ্কর বৈঠক নতুন মাত্রা পেতে পারে বলে বিদেশমন্ত্রকের আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন। গত ১৫ জুন পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে ওয়াংয়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। তারই প্রেক্ষিতে এলএসি-তে উত্তেজনা কমাতে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছিয়ে ‘বাফার জোন’ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের উপস্থিতিতে গত ২৩ জুন ত্রিপাক্ষিক ভিডিয়ো-কনফারেন্স করেন জয়শঙ্কর এবং ওয়াং। ৫ জুলাই চিনা বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন দোভাল।
তবে গালওয়ানের পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪ থেকে অনেকটা পিছু হটলেও পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৫ (হট স্প্রিং), গোগরার পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৭, দেপসাং উপত্যকা এবং প্যাংগং হ্রদের উত্তরে ফিঙ্গার এরিয়া-৮ থেকে ৪ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে এখনও মোতায়েন রয়েছে লাল ফৌজ। কিন্তু মে মাসের আগে লাদাখের ওই এলাকাগুলিতে ভারতীয় সেনা নিয়মিত টহল দিত।
আরও পড়ুন: চিনের আগ্রাসী আচরণের প্রতিবাদ করেও আলোচনাতেই সায় রাজনাথের
অন্যদিকে, ৩০ অগস্টের পর থেকে প্যাংগং লেকের দক্ষিণে সবক'টি উঁচু এলাকাতেই ভারতীয় ফৌজ ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। থাকুং সেনাঘাঁটির অদূরে হেলমেট এলাকা থেকে রেচিন লা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা থেকে চিনা ফৌজের গতিবিধির উপর নজর রাখছে সেনা। সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কালা টপ, মুকপরী এবং রেজাংলাতেও ভারতীয় সেনা ঘাঁটি গেড়েছে। ফলে প্যাংগংয়ের দক্ষিণে স্পাংগুর হ্রদ লাগোয়া উপত্যকায় মোতায়েন চিনা বাহিনীও চলে এসেছে ‘নাগালে’। এই পরিস্থিতিতে চিন ওই এলাকাগুলি থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে। পাশাপাশি, এক ইঞ্চিও জমি ছাড়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেজিং।