রেল এমন খাবার দেয় কী ভাবে? রাজধানী এক্সপ্রেস রবিবার হাওড়ায় পৌঁছনোর পরে প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
হেমন্ত-শীতে কুয়াশা হবে। স্বাভাবিক। তার জন্য ট্রেন কমবেশি দেরি করবে এবং নাকাল হতে হবে। যাত্রীরা জানেন।
কিন্তু রেল সেটা জেনেও ভোগান্তি ঠেকানোর ব্যবস্থা করেনি। উপরন্তু প্যান্ট্রিকারে কোপ মেরে বাড়তি ভোগান্তির বন্দোবস্ত করা হয়েছে। দেরির জন্য যে-খাবার দেওয়া হয়েছে, তা মুখে দেওয়ার যোগ্য নয় বলে অভিযোগ। ফলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ।
রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো নামী ট্রেনে একটি করে প্যান্ট্রিকার কেটে দিলে অবস্থা কী হয়, রবিবার সেটাই হাড়ে হাড়ে টের পেলেন যাত্রীরা। ট্রেন ১৫ থেকে ২৮ ঘণ্টা দেরি করলে বাড়তি খাবার আর পানীয় জলটুকু অন্তত চাই। কিন্তু রাজধানী-সহ দূরপাল্লার বিভিন্ন ট্রেনে যথেষ্ট জল মেলেনি। যে-খাবার দেওয়া হয়েছে, তা এতই নিম্ন মানের যে, ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন যাত্রীরা। মোগলসরাই ও পটনায় যাত্রী-বিক্ষোভ সামলাতে আরপিএফ ডাকতে বাধ্য হয় রেল। পরে হাওড়ায় নেমেও রেলকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন কুয়াশায় আটকে পড়া রাজধানীর যাত্রীরা।
এত দিন রাজধানী এক্সপ্রেসে সামনে-পিছনে একটি করে মোট দু’টি প্যান্ট্রিকার (খাবারের গাড়ি) থাকত। মাস ছয়েক আগে রেলকর্তারা আচমকাই দেশের সব ক’টি রাজধানী এক্সপ্রেস থেকে একটি করে প্যান্ট্রিকার তুলে দেন। আর তাতেই দেখা দেয় বিপত্তি। যাত্রীদের বক্তব্য, প্যান্ট্রিকার কমে যাওয়ায় এমনিতেই রাজধানীতে অতিরিক্ত খাবার রাখা সম্ভব হয় না। কুয়াশা বা অন্যান্য কারণে ট্রেন আটকে গেলে অতিরিক্ত খাবার জোগানোর উপায় নেই। তার ফল কী হয়, এ দিন সারা যাত্রাপথে তা টের পেয়েছেন যাত্রীরা।
কিন্তু রেলের হেলদোল নেই। রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, একটি প্যান্ট্রিকার তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হয়েছিল, তখন কুয়াশার উপদ্রব ছিল না। সামান্য শীত পড়তে না-পড়তেই শুরু হয়েছে কুয়াশার দাপট। মাঝপথে ৮-১০ ঘণ্টার বেশি আটকে থাকছে ট্রেন। কোনও কোনও ট্রেন ২০-২২ ঘণ্টা দেরি করছে রাস্তায়। ফলে যাত্রীদের অতিরিক্ত খাবার দিতে হচ্ছে। তখনই শুরু হচ্ছে গোলমাল। খাবার তো দূর অস্ত্, এক বারের বেশি দু’বার গরম চা পরিবেশন করতেও কালঘাম ছুটে যাচ্ছে খাবার সরবরাহকারীদের।
অতিরিক্ত খাবারের ক্ষেত্রে রেল বোর্ড যে-মেনু ঠিক করে দিয়েছে, সেটা যে যাত্রীদের পছন্দ হওয়ার কথা নয়, রেলকর্তাদের একাংশও সেটা স্বীকার করে নিচ্ছেন। নির্দেশে বলা হয়েছে, ট্রেন বেশি সময় আটকে থাকলে যাত্রীদের খেতে হবে স্রেফ ভাত-ডাল-আচার। রাজধানী-দুরন্ত-শতাব্দীর মতো কুলীন ট্রেনের কোনও যাত্রীই যা খেতে অভ্যস্ত নন।
ভুক্তভোগী যাত্রীরা এ দিন দেরির জন্য যত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তার থেকে বেশি সরব ছিলেন ট্রেনে ‘অখাদ্য’ সরবরাহ করায়। হাওড়ায় নেমে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। বিক্ষুব্ধ যাত্রীদের বক্তব্য, কুয়াশার মোকাবিলার জন্য কেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেটা তো বড় প্রশ্ন বটেই। তবু কুয়াশা প্রাকৃতিক সমস্যা বলেই সেটা মেনে নিতে হয়। কিন্তু অস্বাভাবিক দেরি হলে রেল খাওয়ার যোগ্য খাবারটুকু দেবে না কেন? যাত্রীদের অভিযোগ, প্রথম দিনের চা থেকে খাবার— সবই ছিল ঠান্ডা। তবে মান খারাপ ছিল না। কিন্তু ট্রেন আটকে যেতেই অতিরিক্ত যে-মেনু বরাদ্দ করেছে, সেগুলো মুখেই দেওয়া যায়নি। বেশির ভাগই ছিল নিম্ন মানের। এবং দুর্গন্ধে ভরা।
শীত পড়লে কুয়াশা হবে জেনেও রেল ব্যবস্থা নিল না কেন?
রেল সূত্রের খবর, মোগলসরাই ও দিল্লির মধ্যে পরিকাঠামোর অভাবে ট্রেনের জট লেগেই থাকে। কয়েক বছর ধরে কুয়াশার কথা মাথায় রেখে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি অনেক জোনের ট্রেন বাতিল করা হয়। তাতে লাইন ফাঁকা পাওয়া যায়। তার ফলে গতি কমিয়ে দিলেও ট্রেনে-ট্রেনে জট পাকিয়ে যায় না। দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কমে। এ বার ট্রেন বাতিলের সেই সময়টা এখনও আসেনি। কিন্তু সমস্যা বাড়িয়েছে আকস্মিক কুয়াশা।
দিল্লি-সহ উত্তর ভারত জুড়ে আচমকা এ-রকম কুয়াশা হল কেন?
মৌসম ভবন সূত্রের খবর, উত্তর ভারত দিয়ে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বয়ে যাওয়ায় সেখানকার বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। তার উপরে তাপমাত্রা কমতে শুরু করায় সেই জলীয় বাষ্প সম্পৃক্ত হয়ে কুয়াশা তৈরি করছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের ভয়ঙ্কর বায়ুদূষণ। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, আরও কয়েক দিন কুয়াশার আশঙ্কা আছে। তবে তার ঘনত্বের কমবেশি হতে পারে। সেই অনুযায়ী যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে বা বাড়বে।
তা হলে কি এখন থেকে রোজই পানীয় জলের অভাবে এবং খাবার মুখে তুলতে না-পেরে পেটে কিল মেরে সফর করতে হবে?
সদুত্তর দিচ্ছেন না রেলকর্তারা।