একটি বন্ধু দল। অন্যটি সরকারের শরিক। সংসদে পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি) বিল পাশ করানোর ক্ষেত্রে এই দুইয়ের বিরোধিতাই এখন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরে-বাইরে আপত্তির চাপে জমি অধিগ্রহণ বিলটিও সংসদে পাশ করানোর রাস্তা পাচ্ছে না সরকার। আগামিকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক রয়েছে। সেখানে তৃতীয় বারের জন্য জমি অধিগ্রহণ অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর।
আর্থিক সংস্কারের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সর্বশক্তি দিয়ে বিল দু’টি পাশ করাতে চায় নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কিন্তু বিরোধীদের চাপে দু’টি বিলই সংসদীয় কমিটিতে পাঠাতে হয়েছে। বিল দু’টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দুই কমিটি আজ আলাদা ভাবে বৈঠকে বসেছিল। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, জয়ললিতার এডিএমকে ও বিজেপির সব থেকে পুরনো শরিক শিবসেনা, উভয়েই বৈঠকে স্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছে জিএসটি-তে।
এডিএমকের যুক্তি, এই বিল ভ্রান্তিতে ভরা। এটি সংসদে পাশ হলে তামিলনাড়ুর প্রভূত ক্ষতি হবে রাজস্বে। একই যুক্তি মহারাষ্ট্রে ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের শরিক শিবসেনারও। বর্তমানে তাদের দখলে রয়েছে বৃহণ্মুম্বই পুরসভা। যার এক বছরের বাজেটই ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। শিবসেনারও আশঙ্কা, জিএসটি বিল পাশ হলে মুম্বই পুরসভারও রাজস্ব ক্ষতি হবে।
পণ্য-পরিষেবা কর চালু করার প্রস্তাবটি দিয়েছিল বিগত মনমোহন সরকারই। তাই নীতিগত ভাবে বাধা দেওয়া সম্ভবনা হওয়ায় কংগ্রেস এখন শিবসেনা বা জয়ললিতার আপত্তিকে ঢাল করে বা অন্য যে কোনও যুক্তি সাজিয়ে বিলটিকে ঠেকিয়ে রাখতে তৎপর। যে কারণে বিলের গুণাগুণ বিচারে না গিয়ে কংগ্রেসের সদস্যরা আজ সংসদীয় কমিটিতে প্রশ্ন তোলেন, গুজরাত সরকার কেন গত তিন বছর ধরে জিএসটি বিলে আপত্তি করেছে? আর এখন কোন যুক্তিতে সায় দিচ্ছে?
পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার জিএসটি বিলের পক্ষে। সূত্রের খবর, তৃণমূলের রাজ্যসভা নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন আজ সংসদীয় সিলেক্ট কমিটির বৈঠকে জানান, তিনটি শর্তে তাঁরা এই বিলে সমর্থন দিতে প্রস্তুত।
• জিএসটি চালু করার জন্য আগামী পাঁচ বছর রাজ্যের যতটা রাজস্ব ক্ষতি হবে, কেন্দ্রকে তা মিটিয়ে দিতে হবে।
• জিএসটি চালুর হওয়ার প্রথম পাঁচ বছর পেট্রোপণ্যকে এর আওতায় আনা যাবে না।
• তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে জিএসটি-র উপরেও কর ধার্য করতে পারবে রাজ্য।
স্থির হয়েছে, সিলেক্ট কমিটির সদস্যরা জিএসটি নিয়ে দক্ষিণের ও পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে আগামী মাসে চেন্নাই ও তার পরে কলকাতায় যাবেন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, তৃণমূলের দাবির ব্যাপারে সরকার মোটামুটি ভাবে রাজি। কিন্তু জয়ললিতার বিরোধিতাই চিন্তায় ফেলেছে মোদী, অরুণ জেটলিদের।
জমি আইন সংশোধনের প্রশ্নে সংসদের যৌথ কমিটিতে আজ প্রথম আলোচনা হয়। আর প্রথম বৈঠকেই ফের স্পষ্ট হয়ে ওঠে এ ব্যাপারে বিরোধিতার মাটি এখনও কতটা কঠিন। কারণ, কংগ্রেস সদস্য জয়রাম রমেশ, তৃণমূলের ডেরেক এবং সিপিএমের সাংসদ মহম্মদ সেলিম- সহ বিরোধী দলের সদস্যরা সকলেই বর্তমান বিলের বিরোধিতা করেন। বৈঠকে স্থির হয়েছে যে, ৮ জুনের মধ্যে কৃষক সংগঠনগুলি বিল নিয়ে তাঁদের মতামত দিতে পারবে। তা ছাড়া আগামী সপ্তাহ থেকে সপ্তাহে দু’দিন করে বিলটি নিয়ে আলোচনা হবে। তার আগেই শিল্প করিডর গঠনের জন্য বিলের ইতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনার একটি দাবি উঠেছিল বিজেপির তরফে। কিন্তু বিরোধীরা তাতেও আপত্তি জানান। বলেন, কৃষকরা কী বলছেন সেটাই আগে খতিয়ে দেখা হবে। উল্টে বিজেপির এক সাংসদ রীতিমতো হাসির খোরাক হয়ে ওঠেন বৈঠকে। কারণ, জমি বিলে যে জমি-মালিকদের সম্মতি নেওয়ার শর্তটিই নেই, সেটাই জানা ছিল না তাঁর!
জিএসটি বিলে বন্ধু ও শরিক দল বিগড়ে বসলেও জমি বিলের ক্ষেত্রে অন্তত এক জন বন্ধুকে পাশে পাচ্ছে বিজেপি। নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দল। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, নবীনদের এ ব্যাপারে বুঝিয়ে প্রায় রাজি করে ফেলেছেন জেটলিরা।