কী ভাবে আগুন লাগল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তর ভারতে তাপপ্রবাহ চলছে। তার জেরেই এই পরিস্থিতি কি না, খতিয়ে দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা।
বায়ুসেনার হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মঙ্গলবার রাজস্থানের সরিস্কা বাঘ সংরক্ষণ এলাকায়। ছবি: পিটিআই।
আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমশ গ্রাস করছে জঙ্গল। রবিবার আগুন লাগার পরে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে রাজস্থানের অলওয়াড়ের সরিস্কা বাঘ সংরক্ষণ এলাকা। ১০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। যা আকারে ১৮০০ ফুটবল মাঠের থেকেও বড়। বন বিভাগ সূত্রে খবর, যে জায়গায় আগুন লেগেছে সেই অঞ্চলেই বহু বাঘের আবাস। সম্প্রতি দু’টি শাবক-সহ এসটি ১৭ নামে এক বাঘিনিকে সেখানে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছিল। পরিস্থিতি সামলাতে আগুন নেভাতে বায়ুসেনার সাহায্য চাওয়া হয়।
আজ সকাল থেকেই আসরে নেমেছে বায়ুসেনার দু’টি কপ্টার। এমআই১৭ ভি৫ কপ্টার দু’টি সিলিসের লেক থেকে জল সংগ্রহ করে আগুন নেভানোর কাজে নেমেছে। বাম্পি বাকেট অপারেশন (বড় প্লাস্টিকে জল ভরে আগুনে জ্বলতে থাকা অঞ্চলে তা ফেলা হচ্ছে) চালানো হয় সেখানে। সেই অপারেশনের ভিডিয়ো বায়ুসেনার তরফে টুইটও করা হয়েছে। ৪০ থেকে ৫০ হাজার লিটার জল ঢালার পরেও আয়ত্তে আসেনি পরিস্থিতি। এখনও কোথাও কোথাও আগুন ছড়িয়ে পড়ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
কী ভাবে আগুন লাগল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তর ভারতে তাপপ্রবাহ চলছে। তার জেরেই এই পরিস্থিতি কি না, খতিয়ে দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সরিস্কা, অলওয়াড় এবং দৌসা রেঞ্জের কর্মী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে দু’শোরও বেশি মানুষ আগুন নেভাতে তৎপর। ইতিমধ্যেই পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করে সরিস্কা রেঞ্জ সংলগ্ন তিনটি গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নায়েব তহসিলদার খেমচন্দ সৈনী জানিয়েছেন, রবিবার পৃথ্বীপুরা-বালেটা গ্রাম সংলগ্ন পাহাড়ি অঞ্চলে আগুন লাগে। ওই দিন রাত ৮টা থেকেই বনকর্মী ও গ্রামবাসীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেন। গত কাল সন্ধেয় নারন্ডী, রোটকোয়ালা এবং বহেড়ী অঞ্চলে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। রোডকেলা, কালাকাড়ী, কাটিঘাটি, নাহারসাটি অঞ্চলেও শুকনো ঘাস এবং বাঁশ গাছের আধিক্যের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
সরিস্কার ডিএফও সুদর্শন শর্মা জানিয়েছেন, দু’দিন আগে জঙ্গলে আগুন লাগার বিষয়টি নজরে আসে। প্রাথমিক ভাবে বনকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নেভাতে সচেষ্ট হন। আকবরপুর রেঞ্জে যেখানে আগুন লেগেছে, সেখানে বাঘের নার্সারি রয়েছে। প্রায় ২৫টি বাঘ থাকার কথা সেখানে। নারেন্ডীতে ২৬ মার্চ এসটি-১৭ নামে বাঘিনির গতিবিধি লক্ষ করা গিয়েছিল। পায়ের ছাপও পাওয়া যায়। তার সঙ্গে দু’টি শাবকও ছিল। সুদর্শন জানিয়েছেন, এসটি-১৭-কে চিহ্নিত করা গিয়েছে। ওই বাঘিনি নিরাপদেই রয়েছে। রোটকোয়ালা অঞ্চলে এসটি ২০ এবং এসটি ১৪ নামে দু’টি বাঘের গতিবিধির উপরেও নিরন্তর নজরদারি চালানো হচ্ছে। তবে অন্য কোনও বাঘ আগুনের কবলে পড়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে বন দফতর।
ইতিমধ্যেই আগুনের গ্রাসে চলে গিয়েছে জঙ্গলের একাংশ। মুখ্য বনসংরক্ষক আর এন মীনার নেতৃত্বাধীন একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। তিনি জানিয়েছেন, গরমের মরসুম শুরুর আগে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হলে এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত। রাজস্থান স্টেট বোর্ড ফর ওয়াইল্ডফায়ার-এর সদস্য সুনীল মেহতাও জানান, ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রিন্সিপাল চিফ কনজ়ারভেটর অব ফরেস্ট ও চিফ ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেনকে চিঠি লিখে সতর্ক করেন। তাঁর বক্তব্য, গরমে আগুন লাগার আশঙ্কা রয়েছে, আগেই বলা হয়েছিল। সেই সময়েই পদক্ষেপ করা হলে হয়তো এমন ঘটত না।