—ফাইল চিত্র।
ভোটের পরীক্ষায় একেবারে লেটার মার্কস নিয়ে গদিতে ফিরেছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু লোকসভায় তিনশোর বেশি আসনে জিতে এলেও, অর্থনীতির পরীক্ষায় নম্বর মোটেই ভাল মেলেনি।
পাঁচ বছর তাঁর দেশ শাসনের পরে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। বাজারে কেনাকাটা পড়তির দিকে। গাড়ি থেকে স্কুটার-বাইকের বিক্রি কমছে। বাজারে কেনাকাটা না হলে কারখানায় উৎপাদন বাড়িয়ে কী লাভ? নতুন কারখানা বসিয়েই বা কী হবে? এই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে শিল্পমহলও নতুন লগ্নিতে উৎসাহ দেখাচ্ছে না। বেকারত্বের হার ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ মাত্রায় উঠেছে। যার অর্থ, গত পাঁচ বছরে অর্থনীতি হোঁচট খেতে খেতেই এগিয়েছে।
শুক্রবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরা মোদী সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবেন। তার আগে একটা বিষয় স্পষ্ট। রাজনীতি ও অর্থনীতির প্রশ্নপত্র এক নয়। রাজনীতিতে চাকরি হল না কেন প্রশ্নের উত্তরে সার্জিকাল স্ট্রাইকের বড়াই করা যায়। স্থায়ী সরকার সত্ত্বেও শিল্পপতিদের লগ্নিতে উৎসাহ নেই কেন, এই প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, বালাকোটে পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে মেরে এসেছি। কিন্তু অর্থনীতির পরীক্ষায় খাতায় উত্তর সুস্পষ্ট আর্থিক নীতিই। মরা অর্থনীতিকে জাগিয়ে তুলতে এক রাতে হঠাৎ সব পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিলের ‘চটজলদি টোটকা’ কাজ করে না, তা-ও পরিষ্কার।
এ বারের বাজেট শুধু ২০১৯-২০-র আয়ব্যয়ের হিসেব নয়। আগামী পাঁচ বছর নরেন্দ্র মোদী সরকারের আর্থিক নীতি কী হবে, তার রূপরেখাও তুলে ধরতে হবে নির্মলাকে। নরেন্দ্র মোদী দেশের অর্থনীতির বহরকে ২০২৪-২৫-এর মধ্যে ৫ লক্ষ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। বাজেটের আগের দিন আর্থিক সমীক্ষা বলেছে, তার জন্য আর্থিক বৃদ্ধির হার নিয়মিত ৮ শতাংশের কোঠায় থাকতে হবে। তার দিশা দেখাতে হবে বাজেটে।
গরিব চাষি, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিল্পমহলের প্রত্যাশাও বিপুল। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাষিদের জন্য বন্ধক ছাড়াই ঋণের বন্দোবস্ত করে দিতে হবে। ছোট-মাঝারি শিল্প, ব্যবসায়ীদের বাজেটে উপহার দরকার। চাকুরিজীবী মধ্যবিত্তের আশা, আয়করে সুরাহা মিলবে। শিল্পমহল কর্পোরেট কর কমার আশার করছে।
এখানেই নির্মলার চ্যালেঞ্জ। রাজকোষে টানাটানি। ভোটের আগের অন্তর্বর্তী বাজেটের হিসেবনিকেশ পাল্টে গিয়েছে। আয়কর, জিএসটি থেকে আয় আশানুরূপ নয়। ফলে নতুন কর ছাড় দেওয়া মুশকিল। উল্টে আয় বাড়াতে অর্থমন্ত্রী উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির উপর কর বা কোটিপতিদের উপর বাড়তি আয়কর বসাবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। আজ মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যন মনে করিয়ে দিয়েছেন, ঘাটতি বাড়িয়ে সরকার যদি বাজার থেকে বেশি ধার করে, তা হলে বাজারের বেসরকারি সংস্থাকে ঋণ দেওয়ার সুযোগ কমে যাবে। অর্থনীতি ও জনগণের দাবি মেটানোর মধ্যে ভারসাম্য রাখাই দেশের প্রথম পুরো সময়ের মহিলা অর্থমন্ত্রীর (এর আগে ১৯৭০-৭১ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছিলেন ইন্দিরা গাঁধী) পরীক্ষা।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।