সাংবাদিক বৈঠকে নির্মলা সীতারামন। বৃহস্পতিবার। পিটিআই
আতশবাজি ছাড়াই দীপাবলি। হাতে টাকা ছাড়াই দীপাবলির দাওয়াই। অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, ছোট-মাঝারি শিল্পমহলের বক্তব্য ছিল, দীপাবলির আগে সরকার মানুষের হাতে নগদ টাকার সংস্থান করলে চাহিদা বাড়বে। তাতে কারখানায় উৎপাদন, বাজারে ব্যবসা বাড়বে। কিন্তু লকডাউনের ধাক্কায় দুমড়ে যাওয়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আজ আরও এক দফা দাওয়াই ঘোষণা করলেও নরেন্দ্র মোদীর সরকার সে পথে হাঁটেনি।
এ দিকে, লকডাউনের ধাক্কায় চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে ২৪% সঙ্কুচিত হয়েছে দেশের অর্থনীতি। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদদের মতে, পরের ত্রৈমাসিকেও অর্থনীতি ৮.৬% সঙ্কুচিত হয়েছে। পর পর দু’টি ত্রৈমাসিকে জিডিপি-র সঙ্কোচন হলেই অর্থনীতির পরিভাষায় মন্দা এসেছে বলে ধরা হয়। ফলে ইতিহাসে এই প্রথম দেশে আর্থিক মন্দা দেখা দিল। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের দাবি, অক্টোবর-জানুয়ারির তৃতীয় ত্রৈমাসিক থেকেই আর্থিক বৃদ্ধি দেখা যাবে।
আজ প্রায় ২.৬৫ লক্ষ কোটি টাকার ১২ দফা দাওয়াই ঘোষণা করেছেন নির্মলা। তাতে মূলত শহরে নতুন রোজগার তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থাকে নয়া কর্মী নিয়োগে উৎসাহ দিতে বলা হয়েছে, ১৫ হাজার টাকার কম বেতনের নতুন কর্মী নিযুক্ত হলে বা লকডাউনে কাজ যাওয়া কর্মীরা ফের কাজে যোগ দিলে, আগামী দু’বছর প্রভিডেন্ট ফান্ডে কর্মীদের দেয় টাকা সরকারই দিয়ে দেবে। কোনও সংস্থায় কর্মীর সংখ্যা এক হাজারের কম হলে সংস্থার দেয় অংশও কেন্দ্র জমা করবে। সরকারি হিসেবে দেশে এমন সংস্থাই ৯৯.১%।
আরও পডুন: চিনকে চাপে রাখতে মোদীর অস্ত্র আসিয়ান
আজকের দাওয়াইয়ের সুবাদে অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে বলে দাবি করেছেন নির্মলা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘এ দিনের আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজ কর্মসংস্থান তৈরিতে, বিভিন্ন ক্ষেত্রের সমস্যা মোচনে, নগদের জোগান বাড়াতে, উৎপাদন বৃদ্ধিতে, আবাসন শিল্পকে চাঙ্গা করতে এবং চাষিদের পক্ষে সহায়ক হবে।’’ শিল্পমহলও এই দাবির সঙ্গে একমত। কিন্তু ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির ক্ষোভ, তাদের জন্য কিছুই নেই।
ছোট-মাঝারি শিল্প ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিআইএ-র আহ্বায়ক কে ই রঘুনাথনের যুক্তি, কোনও সংস্থা প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা করতে পারছে না বলে কর্মী ছাঁটাই করেছে, এই ধারণাটাই ভুল। শুধু পিএফের টাকা দিলে নতুন চাকরি হবে না। তাঁর বক্তব্য, মধ্যবিত্ত, পেশাদার, ছোট-মাঝারি সংস্থা, পরিষেবা ক্ষেত্রের জন্য এই দাওয়াইয়ে কিছু নেই।
গ্রামে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের রোজগারের ব্যবস্থা করতে আজ আরও অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। আবাসন ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে নতুন ফ্ল্যাট কেনায় কিছু বাড়তি আয়কর ছাড়ের ঘোষণা হয়েছে। পরিকাঠামো ও রফতানি ক্ষেত্রকেও চাঙ্গা করার রাস্তা খুঁজছেন অর্থমন্ত্রী। লকডাউনে মুখ থুবড়ে পড়া শিল্প সংস্থাগুলির জন্য বন্ধক ছাড়াই ঋণ গ্যারান্টির ঘোষণা হয়েছিল। সমস্যায় পড়া ২৬টি ক্ষেত্রের ছোট-মাঝারি শিল্পকেও এই প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে।
এ দফায় কোথায় কত অর্থ*
নতুন কর্মসংস্থান ৬,০০০
শহরে সকলের জন্য
আবাসন ১৮,০০০
গ্রামীণ রোজগার ১০,০০০
সারে ভর্তুকি ৬৫,০০০
পরিকাঠামো ৬,০০০
রফতানি বৃদ্ধিতে ৩,০০০
কোভিড টিকার গবেষণায় ৯০০
শিল্পের পরিকাঠামো,
প্রতিরক্ষা উৎপাদনে ১০,২০০
শিল্পোৎপাদন বাড়াতে ১,৪৫,৯৮০
উৎসাহ ভাতা মোট ২,৬৫,০৮০
এখনও পর্যন্ত দাওয়াই
প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা ১,৯২,৮০০
আত্মনির্ভর ভারত ১১,০২,৬৫০
অভিযান ১
প্রধানমন্ত্রী অন্ন যোজনা ৮২,৯১১
আত্মনির্ভর ভারত
অভিযান ২ ৭৩,০০০
আত্মনির্ভর ভারত
অভিযান ৩ ২,৬৫,০০০
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের
দাওয়াই ১২,৭১,২০০
মোট ২৯,৮৭,৬৪১
*হিসেব কোটি টাকায়
আজ অর্থমন্ত্রী যে ২.৬৫ লক্ষ কোটি টাকার দাওয়াই ঘোষণা করেছেন, তার মধ্যে শিল্পে উৎপাদন বাড়াতে ১.৪৬ লক্ষ কোটি টাকার উৎসাহ ভাতা বুধবারই ঘোষণা হয়েছিল। এ দিনের দাওয়াই ১.১৯ লক্ষ কোটি টাকার মতো। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের কণিকা পাসরিচার মতো অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, সরকার ২.৬৫ লক্ষ কোটি টাকার দাওয়াই ঘোষণা করেছে ঠিকই। কিন্তু এর অর্ধেকের বেশি আগামী পাঁচ বছর ধরে খরচ হবে।
লকডাউনে রাজস্ব আয় কমায় কোষাগারের হাঁড়ির হাল। অর্থ মন্ত্রকের ইঙ্গিত, ধার করেই অর্থনীতিতে টাকা ঢালতে হবে। তার ধাক্কায় রাজকোষ ঘাটতি কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, তা নিয়ে অর্থমন্ত্রী মুখ খুলতে চাননি। তাঁর দাবি, এখনও পর্যন্ত মোট দাওয়াইয়ের পরিমাণ ২৯ লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। যা জিডিপি-র ১৫%। এর মধ্যে সরকারের ঘর থেকেই ৯% টাকা খরচ হচ্ছে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক মন্দা নিয়ে যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, তা ধামাচাপা দিতে আজ দিওয়ালি ধামাকা হল।” আর পি চিদম্বরমের মতে, ‘‘লক্ষ লক্ষ মানুষ রোজগার হারিয়েছেন। যত ক্ষণ না তাঁদের হাতে টাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে, বাজারে চাহিদা বাড়বে না।’’