সুন্দরবন বলতে যেমন জলে কুমীর ডাঙায় বাঘ বুঝি আমরা, আজ থেকে কোটি কোটি বছর আগে, মেসোজোয়িক যুগে পৃথিবীর অবস্থাও ঠিক তেমনই ছিল। সেইসময় পৃথিবীতে বহু বিশাল সরীসৃপের উত্থান ঘটে। যাদের মধ্যে অন্যতম হল ডাইনোসর। সেইসময় স্থলভাগে রাজত্ব ছিল ডাইনোসরদের। আর জলে দাপিয়ে বেড়াত ইকথিয়োসরেরা।
কিন্তু গল্প, উপন্যাস এবং সর্বোপরি হলিউড, এই তিনের দৌলতে ডাইনোসর নিয়ে সাধারণ মানুষের যে কৌতূহল দেখা যায়, ইকথিয়োসরকে নিয়ে তেমন উৎসাহ দেখা যায় না। তাই বলে ডাইনোসরদের চেয়ে কোনও অংশে কম ছিল না এই ইকথিয়োসর।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, আজ থেকে প্রায় ৯ কোটি বছর আগে পৃথিবী থেকে লুপ্ত হয়ে যায় ইকথিয়োসর। কিন্তু তার আগে প্রায় ১৫ কোটি বছর জলে রাজত্ব করেছে তারা। গ্রিক শব্দ ইকথিয়োসর বলতে আসলে ‘ফিশ লিজার্ড’ বোঝায়।
১৮১১ সালে ইংল্যান্ডের ডরসেটে প্রথম ইকথিয়োসরের সম্পূর্ণ জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন মেরি অ্যানিং নামের এক জীবাশ্মবিদ। ১৮১৪ সালে যখন সেই ছবি প্রকাশিত হয়, তখন তাকে সাঁতারু ড্রাগন বলেও উল্লেখ করেন অনেকে। সেই থেকে জুরাসিক উপকূল-সহ পৃথিবীর বহু জায়গায় ইকথিয়োসরের জীবাশ্ম এবং কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে। তবে তার সম্পূর্ণ দেহের কঙ্কাল খুব কমই পাওয়া গিয়েছে।
এখনও পর্যন্ত মোট ৯ প্রজাতির ইকথিয়োসরের হদিশ মিলেছে। এর মধ্যে টেমনোডন্টোসরাসই আয়তনে সবচেয়ে বড়। এটি প্রায় ৩৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা। তবে এখনও পর্যন্ত যত প্রাণীর হদিশ মিলেছে, তার মধ্যে ইকথিয়োসরের চোখই সবচেয়ে বড়। এর একটা চোখই প্রায় ১০ ইঞ্চি বড় ছিল।
এর চোয়াল কুমীরের মতো লম্বা তবে অগ্রভাব অনেক বেশি সূচালো। মুখের মধ্যে সারি সারি অত্যন্ত ধারালো দাঁত ছিল। এটি দেখতে খানিকটা ডলফিনের মতো। অন্যান্য প্রাণী তো বটেই, বড় ইকথিয়োসররা ছোট ইকথিয়োসরদেরও খেয়ে ফেলত বলে জানা গিয়েছে।
ডলফিনের মতো ইকথিয়োসরের পূর্বপুরুষররা স্থলজীবী ছিল বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। বিবর্তিত হয়ে পরে জলে আশ্রয় নেয় এরা। একই সঙ্গে সরীসৃপ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যেত এদের মধ্যে। নিজেদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারত এরা।
এদের বুকের নীচে, পিঠের উপর এবং লেজের খানিকটা উপরে, সবমিলিয়ে চারটি ডানা ছিল। তবে ডলফিনের মতো আড়াআড়ি না হয়ে, হাঙরের মতো এদের লেজ খাড়া ছিল।
ইকথিয়োসরের কানের হাড় আকারে অনেক বড় ছিল। এর ফলে জলের কম্পন থেকে এরা শিকার এবং বিপদ, দুইয়েরই উপস্থিতি বেশি টের পেত।
বহু জায়গায় ইকথিয়োসরের এমন জীবাশ্ম উদ্ধার হয়েছে, যার মধ্যে ছোট ছোট ইকথিয়োসরের হদিসও মিলেছে। তা থেকে বিজ্ঞানীদের ধারণা, এরা ডিম পাড়ত না। বরং সন্তান প্রসব করত।
২০১৭ সালে ভারতে প্রথম বার গুজরাতের কচ্ছ এলাকায় ইকথিয়োসরের একটি জীবাশ্ম মেলে। ৮ ফুট লম্বা জীবাশ্মটি প্রায় সম্পূর্ণ অবস্থায় পাওয়া যায়। শুধু মাথার খুলি এবং লেজের কাছের কিছু অংশ মেলেনি। সেটি প্রায় ১৫ কোটি বছর পুরনো বলে সেই সময় দাবি করেন বিজ্ঞানীরা।