কর্নাটকের নির্বাচনের শেষবেলার প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একের পর এক জনসভায় বজরংবলীর জয়ধ্বনি তুলেছিলেন। ফাইল ছবি।
নরেন্দ্র মোদীর উগ্র হিন্দুত্ব ও জাতীয়তাবাদের ধুয়ো শুধু যে কাজ করেনি, তা নয়। উল্টে কর্নাটকে তা বিজেপির বিরুদ্ধে গিয়েছে বলে কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন।
কর্নাটকের নির্বাচনের শেষবেলার প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একের পর এক জনসভায় বজরংবলীর জয়ধ্বনি তুলেছিলেন। কংগ্রেস কর্নাটকের অখণ্ডতা রক্ষার কথা বলায় প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ তুলেছিলেন, কংগ্রেস কর্নাটককে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করছে। সে সময় কংগ্রেস নেতাদের ভয় ছিল, উগ্র হিন্দুত্ব ও জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে মোদী বিজেপিকে কর্নাটকের বৈতরণী পার করিয়ে ফেলবেন। কিন্তু ভোটের ফল বিশ্লেষণ অন্য কথা বলছে। কংগ্রেস নেতাদের দাবি, বিজেপির এই উগ্র হিন্দুত্ব ও হিন্দি বলয়ে সফল হওয়া জাতীয়তাবাদের ধুয়ো দেখে কর্নাটকের প্রায় সব সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষই কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। একমাত্র উচ্চবর্ণ ও লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের ভোট বাদে। ভোক্কালিগাদের পাশাপাশি কুরুবাদের মতো অনগ্রসর সম্প্রদায়, অন্যান্য ওবিসি, দলিত, মুসলিম, আদিবাসীদের বেশির ভাগ ভোট কংগ্রেস পেয়েছে।
কেন এই ফল? বিজেপি কর্নাটকে এত দিন উগ্র হিন্দুত্বের পথে না হেঁটে লিঙ্গায়েত, ভোক্কালিগাদের মঠের মাধ্যমে তাঁদের ভোট কুড়োনোর চেষ্টা করেছে। দক্ষিণ ভারতের মানুষ বরাবরই নিজেদের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতির আঞ্চলিক পরিচিতি নিয়ে স্পর্শকাতর। বিজেপি এ বার গোটা দেশের মতো কর্নাটকেও উগ্র হিন্দুত্ব, জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তোলায় কর্নাটকের মানুষ মনে করেছেন, বিজেপির হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্তানের দাপটে তাঁদের আঞ্চলিক পরিচিতি ধামাচাপা পড়ে যেতে পারে।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, এই কারণেই কংগ্রেস ওবিসি, দলিত, আদিবাসী, মুসলিম ভোটে বাকি সবাইকে টেক্কা দিয়েছে। তবে উচ্চবর্ণের ভোট বিজেপি বেশি পেয়েছে। লিঙ্গায়েতদের বড় অংশ কংগ্রেসকে ভোট দিলেও তাদের অধিকাংশ ভোট বিজেপি পেয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস গত নির্বাচনে ১২টি দলিত বা তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত আসনে জিতেছিল। এ বার ২১টি জিতেছে। আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত ১৫টি আসনের ১৪টিই কংগ্রেস পেয়েছে। বিজেপি একটিও জেতেনি। যে ৯ জন মুসলিম বিধায়ক জিতেছেন, সকলেই কংগ্রেসের।
কর্নাটকের ওয়াকফ বোর্ডের প্রধান শাফি সাদি দাবি তুলেছেন, কংগ্রেসকে মুসলিমদের মধ্যে থেকে এক জনকে উপমুখ্যমন্ত্রী, পাঁচ জনকে মন্ত্রী করতে হবে। যা তুলে ধরে বিজেপি নেতা অমিত মালবীয় বলেছেন, কংগ্রেসকে তোষণের রাজনীতির দাম চোকাতে হবে। কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরার পাল্টা দাবি, শাফি সাদি বিজেপির মদতেই ওয়াকফ বোর্ডের প্রধান হয়েছিলেন।