Kaliaganj Incident

মৃত মেয়ের দেহ বাইকে চাপিয়ে বাড়ি আনলেন বাবা, কালিয়াগঞ্জের ছবি মধ্যপ্রদেশের শাহদোলে

মধ্যপ্রদেশের শাহদোলের কোটা গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মণ। সম্প্রতি তাঁর ১৩ বছরের কন্যা সিকেল সেল অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হয়। মেয়েকে শাহদোলের এক সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৩ ১৩:১৭
Share:
Father takes daughter’s body on bike after hospital denies providing ambulance in Madhya Pradesh

অসহায়তার দুই ছবি মিলিয়ে দিল কালিয়াগঞ্জ এবং শাহদোলকে। ছবি: সংগৃহীত।

পশ্চিমবঙ্গের কালিয়াগঞ্জ এবং মধ্যপ্রদেশের শাহদোল। কোনও ফারাক নেই। দু’জায়গাতেই ফুটে উঠেছে অমানবিকতার ছবি। চরম অসহায়তা। দু’জায়গার দুই অসহায় বাবাকে মিলিয়ে দিয়েছে তাঁদের অভাবও। টাকার অভাবে এক জন পাঁচ মাসের পুত্রসন্তানের মৃতদেহ নিয়ে ফিরেছিলেন ব্যাগে করে। অন্য জন নিয়ে ফিরলেন মোটরবাইকে চাপিয়ে।

Advertisement

মৃত সন্তানের দেহ অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য আট হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল। সেই টাকা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক বাবার। তাই বাধ্য হয়ে ব্যাগের মধ্যে ভরে শিশুপুত্রের দেহ হাসপাতাল থেকে বাসে করে বাড়ি নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছিল কালিয়াগঞ্জের অসীম দেবশর্মাকে। একই অসহায়তার ছবি ফুটে উঠল মধ্যপ্রদেশের শাহদোলেও। মৃত মেয়েকে শববাহী গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার টাকা না থাকায় কন্যার দেহ মোটরবাইকে চাপিয়েই বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলেন লক্ষ্মণ সিংহ।

লক্ষ্মণ শাহদোল থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরের কোটা গ্রামের বাসিন্দা। সম্প্রতি তাঁর ১৩ বছরের কন্যা মাধুরী সিকেল সেল অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হয়। মেয়েকে শাহদোলের এক সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন তিনি। সোমবার রাতে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় মাধুরীর। মেয়ের দেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলেন লক্ষ্মণ। অভিযোগ, তাঁর বাড়ি হাসপাতাল থেকে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে না হওয়ায় তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্স দিতে রাজি হননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শববাহী গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যাওয়ার মতো টাকাও তাঁর কাছে ছিল না। তাই মেয়ের দেহ মোটরবাইকে চাপিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নিরুপায় লক্ষ্মণ।

Advertisement

লক্ষ্মণ বলেন, ‘‘আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি অ্যাম্বুল্যান্স চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা জানান যে, ১৫ কিলোমিটারের বেশি দূরে বাড়ি হলে অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যায় না। আমাদের নিজেদের ব্যবস্থা করে নিতে বলে। টাকার অভাব। কিন্তু মেয়েটাকে তো বাড়ি নিয়ে যেতে হবে। তাই মেয়ের দেহ মোটরবাইকে ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’’

তবে লক্ষ্মণের অসহায়তার খবর পেয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন শাহদোলের জেলাশাসক বন্দনা বৈদ্য। লক্ষ্মণের বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার আগে তাঁকে ওই ভাবে মেয়ের দেহ নিয়ে যেতে দেখেন বন্দনা। তখন মেয়ের দেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য লক্ষ্মণকে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে নির্দেশ দেন তিনি। যেমনটা কালিয়াগঞ্জের অসীমকে ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলার গৌরাঙ্গ দাস।

কালিয়াগঞ্জের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করে নবান্নও। তেমনই শাহদোলের ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।

কালিয়াগঞ্জের অসীম এবং শাহদোলের লক্ষ্মণের ঘটনা যেন একই সূত্রে গাঁথা। দু’জনেই অভাবী। দু’জনেই নিরুপায়। টাকার অভাবে সন্তানদের মৃত্যুর পর সন্তানদের দেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স অবধি জোগাড় করতে পারেননি তাঁরা। অসহায়তার দুই ছবি মিলিয়ে দিল শাহদোল এবং কালিয়াগঞ্জকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement