ইংল্যান্ডের হেলিংলে মানসিক হাসপাতাল। ৩৩ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই হাসপাতালকে নিয়ে রয়েছে নানা গল্প। নানা জনশ্রুতি। আবার কিছু হাড় হিম করা ‘সত্যি ঘটনা’।
ইংল্যান্ডের পূর্ব সাসেক্সের হেলিংলে গ্রামে তৈরি হয়েছিল হেলিংলে মানসিক হাসপাতাল। ১৯০৩ সালের ২০ জুলাই এই মানসিক হাসপাতালটির উদ্বোধন হয়।
অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই হেলিংলে হয়ে উঠেছিল ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা মানসিক হাসপাতাল। মনে করা হয়, হেলিংলে বিখ্যাত হওয়ার নেপথ্যে ছিল সেখানকার চিকিৎসকদের চিকিৎসা করার অভিনব পদ্ধতি এবং চিকিৎসা নিয়ে চলা পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
শোনা যায়, মানসিক হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের নিয়ে অনেক ‘অদ্ভুত’ পরীক্ষাও করতেন সেখানকার চিকিৎসকেরা। তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিতর্কও।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে যে সব মানসিক রোগীকে পশ্চিম সাসেক্সের হাসপাতাল থেকে চলে আসতে হয়েছিল, তাঁদের জন্যও অন্যতম আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছিল হেলিংলে।
এই হাসপাতালের মূল ভবনে ছিল একটি প্রশাসনিক বিভাগ, গুদামঘর, রান্নাঘর, একটি বিনোদন হল এবং সহকারী চিকিৎসকদের বাসভবন।
লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে রোগী এবং হাসপাতাল কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা ছিল আলাদা আলাদা।
কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক বিভাগের পশ্চিমে পুরুষ রোগীদের ওয়ার্ড, জলাধার, এবং হাসপাতাল রক্ষণাবেক্ষণের বিভাগ ছিল। মহিলা ওয়ার্ডগুলি হাসপাতালের পূর্ব দিকে ছিল। একই সঙ্গে ছিল জামাকাপড় কাচার জায়গা, সেলাইঘর এবং একটি নার্সদের থাকার জায়গা।
হেলিংলে মানসিক হাসপাতালের স্থপতি ছিলেন জর্জ টমাস হাইন। জর্জ ছিলেন সমসাময়িক ইংল্যান্ডের এক জন বিখ্যাত স্থপতি।
হাসপাতালটিতে চমক ছিল আরও। হেলিংলে হাসপাতালে যাতায়াতের জন্য প্রশাসনের তরফে একটি ব্যক্তিগত রেলপথ তৈরি করা হয়েছিল। যা যাত্রীদের পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা পরিবহণের কাজেও ব্যবহৃত হত।
এমনকি, হাসপাতালের ভিতর একটি বৈদ্যুতিক ট্রাম ছিল। যা ওই রেলপথেও যাতায়াত করত। সেই সময় ইংল্যান্ডে এমন আর একটি হাসপাতালও ছিল না, যাদের নিজস্ব রেলপথ এবং ট্রাম ছিল।
ট্রামটি হাসপাতালের ভিতরে পণ্য পরিবহণের জন্য এবং ক্রীড়াকেন্দ্রের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কাজে ব্যবহার করা হত।
১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, হেলিংলেকে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বের পাঁচটি মানসিক হাসপাতালের মধ্যে সেরা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু ১৯৯০ সালে হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালটি। কর্তৃপক্ষের তরফে হাসপাতালে রোগীভর্তির খরচ বাড়িয়ে দেওয়ায় অনেকেই হেলিংলেতে আর রোগী ভর্তি করাতে চাইতেন না। আর সেই কারণেই বন্ধ হয়ে যায় মানসিক হাসপাতালটি। যদিও অনেকের মতে হাসপাতাল বন্ধ হওয়ার আসল কারণ ছিল অন্য।
অভিযোগ ওঠে, হাসপাতাল বন্ধ করে যাওয়ায় অনেক রোগীকে ভুয়ো নিরাময় শংসাপত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা বাড়তে থাকে। অনেক রোগী হাসপাতাল থেকে ফিরে খুনও করেন বলে অভিযোগ।
আরও এক অভিযোগ ওঠে হেলিংলের হাসপাতালের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠে, হাসপাতালে সর্বাধিক ৭০০ জন রোগী থাকার ব্যবস্থা থাকলেও, এক সময় নাকি সেখানে ১২৫০ জন রোগীকে ভর্তি রাখা হয়েছিল। ফলে অনেকের চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে।
এ-ও অভিযোগ ওঠে, সুস্থ করে তুলতে রোগীদের অসহ্য অত্যাচার করতেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রয়োগ করা হত বৈদ্যুতিক শক এবং লোবোটমির মতো ‘বিকল্প’ চিকিৎসা পদ্ধতিও। রোগীদের উপর নিষিদ্ধ কয়েকটি চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ ওঠে।
এ-ও প্রচলিত রয়েছে যে, চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারণে অনেক রোগীর মৃত্যু হয় হেলিংলেতে। সেই সব ‘প্রেতাত্মা’র দৌরাত্ম্যেই নাকি হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর হাসপাতাল চত্বরে ভাঙচুর এবং চুরির ঘটনা বাড়তে থাকে। এমনকি, ‘অজানা কারণে’ হাসপাতালটিতে আগুনও লেগে যায়।
হেলিংলে গ্রামের মানসিক হাসপাতাল আজও ভগ্নপ্রায় অবস্থায় ইতিহাসের সাক্ষী বহন করছে। ‘ভূতুড়ে’ বলেও দুর্নাম রয়েছে হেলিংলে মানসিক হাসপাতালের।