সন্তানহারা বাবা বিনোদ ঠাকুর। ছবি সংগৃহীত।
প্রতিবেশীর হাতে খুন হয়েছে তাঁর দুই পুত্র। অন্য আর এক পুত্র আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বদায়ুঁকাণ্ডে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে মূল অভিযুক্ত সাজিদ মহম্মদের। অন্য অভিযুক্ত তাঁর ভাই জাভেদ বুধবার রাতে আত্মসমপর্ণ করেছে পুলিশের কাছে। সেই জাভেদকে ‘এনকাউন্টার’ না করার জন্য পুলিশের কাছে অনুরোধ করলেন মৃত নাবালকদের বাবা বিনোদ ঠাকুর।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বদায়ুঁতে প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে তাঁদের দুই ছেলেকে খুন করার অভিযোগ ওঠে সাজিদের বিরুদ্ধে। পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার সময় বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করছিলেন সাজিদের ভাই জাভেদ। পুলিশ সূত্রে খবর, দু’জনেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে পুলিশ যখন সেখানে পৌঁছয় তখন দুই পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই শুরু হয়। পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু হয় সাজিদের। গুলি লাগে জাভেদেরও। কিন্তু তিনি পালিয়ে যান। প্রায় ২৪ ঘণ্টা লুকিয়ে থাকার পর বুধবার রাতে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন সাজিদের ভাই।
জাভেদের আত্মসমর্পণের কথা শুনে সন্তানহারা বাবা বিনোদ পুলিশের কাছে অনুরোধ করেন যাতে জাভেদকে এনকাউন্টার করা না হয়। কেন তিনি এই অনুরোধ করছেন তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বিনোদ। তিনি বলেন, ‘‘জাভেদকে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত যাতে আমরা জানতে পারি যে তাঁরা কেন এমন কাণ্ড করলেন। যদি এনকাউন্টারে জাভেদেরও মৃত্যু হয় তবে খুনের কারণ অজানাই থেকে যাবে। এই কাণ্ডে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। আমাদের জানতে হবে যে আমার সন্তানেরা কোনও ষড়যন্ত্রের শিকার কি না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি জানতে চাই আমার সন্তানদের হত্যার নেপথ্যে কারণ কী ছিল? আমি মোদী (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী) এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে আবেদন করছি যাতে আমরা সত্যটা জানতে পারি।’’
সাজিদ এবং জাভেদকে ভাল করেই চিনতেন বিনোদেরা। তাঁর বাড়িতে আসা যাওয়া ছিল দুই ভাইয়ের। মৃত দুই নাবালকের মা সঙ্গীতা বলেন, ‘‘সাজিদ আমাদের পরিচিত। সন্ধ্যাবেলা বাড়িতে এসে প্রথমে আমার কাছে একটা ক্লিপ চায়। আমি ওকে সেটা দিই। তার পর বলে আমার পাঁচ হাজার টাকার খুব দরকার। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রাতে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। আমি আমার স্বামীকে ফোন করে সাজিদের কথা জানাই। তিনি টাকা দিয়ে দিতে বলেন। আমি দিয়ে দিই। সাজিদকে চা খেতে বলি।’’
মৃত দুই নাবালকের পরিবার পুলিশকে জানিয়েছে, সাজিদ যখন বিনোদের বাড়িতে এসেছিলেন, তখন বাইরে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর ভাই জাভেদ। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বাড়ি থেকে সাজিদ বার হতেই তাঁকে নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, নিকটবর্তী একটি জঙ্গলে লুকিয়ে ছিলেন সাজিদ ও তাঁর ভাই। সেখানে পুলিশ পৌঁছলে তাদের উপরেও আক্রমণ চালান তাঁরা। শুরু হয় দু’পক্ষের সংঘর্ষ। পুলিশের তরফে গুলি চললে সেই গুলির আঘাতে প্রাণ হারান সাজিদ। আর জাভেদের গুলি লাগলেও তিনি এলাকা থেকে পালিয়ে যান।
বুধবার রাতে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন সাজিদের ভাই। জাভেদের দাবি, তিনি ঘটনার পরই ভয়ে দিল্লিতে পালিয়ে যান। তবে বুধবার যখন তিনি বরেলিতে আসেন, তখনই স্থানীয়েরা তাঁকে ধরে ফেলেন। জাভেদকে মারধরও করা হয়েছে বলে অভিযোগ। জাভেদকে ধরার পর তাঁর একটি ভিডিয়ো করা হয়। সেই ভিডিয়োতে জাভেদ দাবি করেছেন, ‘‘দিল্লি থেকে আমি আত্মসমর্পণ করতেই এসেছি। আমার দাদা করেছে (জোড়া খুন)। আমি কিছু করিনি। দয়া করে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিন।’’ যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।