ফাইল ছবি।
ক্রমশ সুস্থতার পথে দিল্লির নিগৃহীতা। প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন রাজধানীর রাজপথে এক তরুণীর মাথা মুড়িয়ে, মুখে কালি মাখিয়ে ‘প্যারেড’ করিয়েছিলেন কয়েক জন মহিলা। আর চারপাশে হর্ষোল্লাসে মেতে উঠেছিলেন বাকিরা।
সেই ভিডিয়ো নেটমাধ্যমে দেন দিল্লির মহিলা কমিশনের প্রধান। যা নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে দেশে। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন আট মহিলা-সহ ১২ জন। ঘটনার পর সপ্তাহ ঘুরতে চলল, মনের ক্ষত এখনও দগদগে। কিন্তু শারীরিক জখম সারিয়ে ক্রমশ সুস্থতার পথে তরুণী। এই প্রেক্ষিতে মুখ খুললেন তরুণীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত পিতা। বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘সুবিচারের আশা আর করি না। শুধু মেয়ে বাড়ি ফিরুক। কোনও নারী, কোনও কন্যাকে যেন এমন দিন দেখতে না হয়।’’
নির্যাতিতা তরুণী তিন বছরের সন্তানের মা। ঘটনার পর থেকে তিনি এখনও ভর্তি হাসপাতালে। সন্তানের দেখাশোনা আপাতত তরুণীর দিদির উপর। পুলিশ সূত্রে খবর, দিল্লির শাহদরা এলাকায় একটি ১৪ বছরের নাবালক ওই তরুণীকে প্রেম নিবেদন করে। কিন্তু তরুণী তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়ায় সে আত্মহত্যা করে। ওই তরুণীকে নাবালকের আত্মঘাতী হওয়ার কারণ হিসেবে দাবি করে তাঁকে অপহরণ করেন মৃতের পরিজন। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ মনে করছে, তার পরই ঘটে গণধর্ষণ এবং মুখে কালি মাখিয়ে, মাথা মুড়িয়ে প্রকাশ্যে ঘোরানোর ঘটনা। তরুণীকে বেধড়ক মারধর করার ছবিও ধরা রয়েছে ভিডিয়োয়। অতঃপর, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই একা মা (সিঙ্গল মাদার)।
ঘটনার পর এই প্রথম মুখ খুললেন তরুণীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত পিতা। বাড়ির অন্যরা জানাচ্ছেন, ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই বিছানায় শুয়ে নীরবে কেঁদেছেন অসহায় পিতা। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তিনি বলেছেন, ‘‘কোনও নারী, কোনও কন্যাকে যেন এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কখনও যেতে না হয়। আমি সুবিচার পাব এমন আশা রাখি না। আমার মেয়েটা শুধু বাড়ি ফিরুক, এটাই চাই।’’
ঘটনার পরই বাড়িতে রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে। এসেছিলেন বিজেপি সাংসদ গৌতম গম্ভীর। দেখা করে গিয়েছেন কংগ্রেসের অনিল চৌধুরিরাও। কিন্তু এতে বিরক্তই হচ্ছে তরুণীর পরিবার। তরুণীর পিতা বলছেন, ‘‘না চাইতেই আমাদের দু’মাসের রেশন দিয়ে গিয়েছেন ওঁরা। আরও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কোনও কারণ ছাড়া কি কেউ এ ভাবে সাহায্য করে? চাইতে চাইতে মাথা কুটে মরে গেলেও অনেকের সাহায্য মেলে না।’’ আর তরুণীর দিদি, কান্না গিলতে গিলতে কেবল বলেন, ‘‘সে দিন যদি মানুষ একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন, তা হলে আজ সাহায্যের দরকার হত না।’’ তার পরই ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘‘এখন আপনারা চান আমরা কী বলি? যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে, সব ভুলে, চলো আবার নতুন শুরু করি!’’
ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে আট জন মহিলা এবং চার জন পুরুষ।