এক সাক্ষাৎকারে যাবতীয় ক্ষোভ ও তিক্ততা উগরে দিলেন ৮৩ বছর বয়সি ফারুক।
ক্ষোভে ফুঁসছে উপত্যকা। প্রমাণ, জঙ্গি দলে নাম লেখানো তরুণের সংখ্যা কোনও মতেই কমানো যাচ্ছে না। ক্ষোভে ফুঁসছেন উপত্যকার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাও। সেই ক্ষোভ এ বার বেরিয়ে এল ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রবীণ সাংসদ ফারুক আবদুল্লার মুখ থেকে। তাঁর মতে, মোদী সরকারের প্রতি আস্থা তো দূর, বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই কারও। নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, “বিনীত ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করি, খানিকটা সৎ হোন। বাস্তবের মুখোমুখি হোন।” ফারুকের মতে, “এই সরকারকে বিশ্বাস করা অসম্ভব। একটা দিন যায় না, যে দিন এরা মিথ্যা বলে না।”
সাত মাস বন্দি থাকার পরে মুক্তি পেলেও এত দিন মুখ খোলেননি ফারুক। কাল প্রথম এক সাক্ষাৎকারে যাবতীয় ক্ষোভ ও তিক্ততা উগরে দেন ৮৩ বছর বয়সি এই নেতা। বলেন, “এটা (আর মোহনদাস) গাঁধীর দেশ নয়।” জানান, গত বছর অগস্টের গোড়ায় উপত্যকায় বিপুল আধাসেনা ঢোকার আগের দিন দেখা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এত বাহিনী আসছে! (অমরনাথ) যাত্রা বন্ধ করা হচ্ছে! আশ্চর্য পরিস্থিতি। যেন পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ হতে যাচ্ছে! “এ সব কেন? প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করতে এ নিয়ে একটি কথাও বললেন না। বললেন, সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গে।” এখন আর তা প্রকাশ্যে আনতে চান না ফারুক। তাঁকে গৃহবন্দি ও বাকি নেতাদের বন্দি রাখার প্রসঙ্গে ফারুক বলেন, “কঠোর বিধিনিষেধ চাপিয়ে ৩৭০ রদের কথা জানলাম পুলিশের কাছে। তখন আমাকে আটকে দেওয়া হয়েছে।”
সংসদে প্রশ্ন ওঠায় সরকার বলেছিল, ফারুক বন্দি নন। সাক্ষাৎকারে সেই প্রসঙ্গ উঠতেই আবেগতাড়িত ফারুক বলেন, “এটা অদ্ভুত! আমরা দেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। আমাদের প্রতি এমন করা হবে কল্পনাও করিনি। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে আমরা এক! ভারতকে বিশ্বাস করার এই ফল! ডাক্তারকে দাঁত বা চোখ দেখাতে হলেও অনুমতি প্রার্থনা করতে হত। থাকার মধ্যে একটা টিভি।” সাংসদ হিসেবে একটা ফোন অন্তত থাকার কথা। এ কথা উল্লেখ করে ফারুক বলেন, “ইংল্যান্ডে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। বলতে পারিনি। প্রতিনিধিদের আমার কাছে আসতে দেওয়া হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকা থেকে কিছু পুতুল এনে ডাল লেকের আশপাশে ঘোরানো হয়েছিল। গোস্তাবা (মাংসের কোপ্তা ও দই দিয়ে তৈরি সুস্বাদু খাবার, কাশ্মীরে যা রাজকীয় খানা হিসেবে গণ্য করা হয়) খাইয়ে বোঝানো হয়েছিল কাশ্মীরে সব ঠিকই আছে।”
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে টিকা ভারতে, বর্ধনের দাবি নিয়ে প্রশ্ন
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহেই মোদীর জন্য ‘এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান’
এক বছরের বেশি কেটে যাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের নথিই বলছে, আদৌ সব ঠিক নেই কাশ্মীরে। যতই উপত্যকার ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার কথা বলা হোক, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মারা পড়ুক জঙ্গিরা— সন্ত্রাসের পথে পা বাড়ানো তরুণের সংখ্যা আদৌ কমছে না উপত্যকায়। কেন্দ্রের খাতাই বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশে অন্তত ৯০ জন তরুণ বিভিন্ন জঙ্গি দলে নাম লিখিয়েছে। বাস্তব সংখ্যাটা যে তার বেশি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, সরকারি কর্তারাই তা মানছেন। নিরাপত্তা বাহিনীকেও এটা উদ্বেগে রেখেছে।
আগে পাক জঙ্গি অনুপ্রবেশ ও তাদের নাশকতার কথা বলা হত। নর্থ ব্লকের এক কর্তাই জানাচ্ছেন, এখন দেখা যাচ্ছে, সংঘর্ষে যে সব জঙ্গি মারা পড়ছে, তাদের বেশির ভাগই স্থানীয়। ২০২০-র প্রথম সাত মাসে নিহত ১৩১ জঙ্গির মধ্যে ১২১ জনই ছিল স্থানীয়। বিদেশি মাত্র ১৫ জন। ২০১৯-এ নিহত ১৫২ জঙ্গির মধ্যে ১১৯ জনই ছিল কাশ্মীরের।
জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা লোপ করে দু’টি কেন্দ্রশাসিত এলাকায় পরিণত করার পর থেকে এক বছরের বেশি কেটে গেলেও, এখনও মুক্তি পাননি বহু রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। ফারুক জানিয়েছেন, সব দলের নেতা-কর্মীরা মুক্তি পেলে, তার পরেই তাঁরা পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থির করবেন।
কিন্তু কবে তা হবে? কোনও ধারণা নেই উপত্যকায় কারও।