রাকেশ টিকায়েত।
সরকার তাঁদের দাবি না মানা পর্যন্ত বাড়ির ফিরবেন না কৃষকরা। দিল্লি সীমানায় আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। চাপ সৃষ্টি করে তাঁদের আলোচনাতেও বসানো যাবে না। জানিয়ে দিলেন ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন (বিকেইউ)-এর নেতা রাকেশ টিকায়েত। আগামী ২ অক্টোবর, গাঁধী জয়ন্তীর মধ্যেই কেন্দ্রকে বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীতে ট্র্যাক্টর মিছিল ঘিরে যে বিশৃঙ্খলা মাথাচাড়া দিয়েছিল, তার স্মৃতি পিছনে ফেলে শনিবার দেশ জুড়ে ৩ ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ চাক্কাজ্যাম পালিত হয়। সেই কর্মসূচি শেষ হতেই দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানার গাজিপুরে দাঁড়িয়ে টিকায়েত সাফ জানিয়ে দেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে পিছু হঠার প্রশ্নই নেই।
শনিবার কৃষকদের উদ্দেশে টিকায়েত বলেন, ‘‘দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ফিরব না আমরা। আইন প্রত্যাহার করতে ২ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছি কেন্দ্রীয় সরকারকে। তার পর পরবর্তী পরিকল্পনা করব। চাপ সৃষ্টি করে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসানো যাবে না আমাদের।’’
ট্র্যাক্টর মিছিল ঘিরে অশান্তির পর কৃষকরা যখন ছত্রখান, সেই সময় টিকায়েতের কাতর আর্তিই সকলকে ফের আন্দোলনমুখী করেছিল। এ দিন চাক্কা জ্যামেও স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মিলেছে গোটা দেশ থেকে। পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, কর্নাটক, তেলঙ্গানা, জম্মু ও কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র-সহ বিভিন্ন রাজ্যে চাক্কাজ্যাম পালিত হয়েছে।
এমনকি ৫০ হাজার পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনী নামিয়ে রাজধানীকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেললেও দিল্লির শহিদ পার্কে কৃষকদের সমর্থনে জড়ো হন অনেকে। তবে পুলিশ সেই জমায়েত ভেঙে দেয়। বেশ কয়েক জনকে আটকও করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয় গোটা এলাকার। আইটিও এবং লালকেল্লা সংলগ্ন এলাকায় মোতায়েন রাখা হয় জলকামানও। কমপক্ষে ৮টি মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয় দিল্লিতে। অশান্তি এড়াতে বেঙ্গালুরুতে শনিবার ৩০ জনকে আটক করে পুলিশ।
দিল্লি-হরিয়ানা সীমানায় কুণ্ডলী থেকে পালওয়াল যাওয়ার সড়ক অবরোধ করেন কৃষকরা। তবে অ্যাম্বুল্যান্স এবং জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত গাড়ি আটকানো হয়নি। উপত্যকায় পাঠানকোট-জম্মু সড়ক অবরোধ করেন কৃষকরা। পঞ্জাবের সাঙ্গুরুর, ভাতিন্ডা-সহ মোট ৩৩টি জায়গায় পথ অবরোধে নেতৃত্ব দেন ভারতী কিসান ইউনিয়ন (একতা উগ্রাহন)-এর সাধারণ সম্পাদক সুখদেব সিংহ কোকরিকালন।
উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং দিল্লিকে শনিবার চাক্কাজ্যাম থেকে নিষ্কৃতী দেওয়া হয়েছিল। টিকায়েত জানান, উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের কৃষকদের নিয়ে আলাদা করে বৈঠক করতে হবে। এই মুহূর্তে তাঁদের দিল্লিতে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। খুব শীঘ্র জেলাস্তরের কৃষক সংগঠনগুলির সদর দফতরে এ নিয়ে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হবে।
শনিবার চাক্কাজ্যামের প্রতি সমর্থন জানায় কংগ্রেস। দলের সাংসদ রাহুল গাঁধী টুইটারে লেখেন, ‘অন্নদাতাদের এই আশন্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহের সঙ্গে দেশের জাতীয় স্বার্থ জড়িয়ে। বিতর্কিত ৩টি আইন শুধুমাত্র কৃষকদের জন্যই ক্ষতিকারকই নয়, সমস্ত দেশবাসীর জন্য ক্ষতিকারক। পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি’।
আইন ৩টি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে পিছু হঠার প্রশ্ন নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কৃষক সংগঠনগুলিও। কেন্দ্রের তরফে ১৮ মাসের জন্য আইন স্থগিত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হলেও, তাতে রাজি হননি তাঁরা