গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে চাষিদের মতামত জানতে সুপ্রিম কোর্টের গড়ে দেওয়া কমিটি থেকে সরে দাঁড়ালেন ভূপেন্দ্র সিংহ মান। চার সদস্যের কমিটির বাকিদের মতো ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের এই নেতার ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। কারণ, আগে থেকেই ওই তিন কৃষি আইনের পক্ষে সওয়াল করছিলেন তিনি।
টানা প্রায় ৫০ দিন দিল্লির সীমানায় আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনগুলি জানিয়েছে, তারা কমিটির সামনে অভিযোগ জানাতে যাবে না। প্রশ্ন তুলেছে, যে কমিটির সদস্যরা আইনের পক্ষে, তার কার্যকারিতা কতটুকু? এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ভূপেন্দ্র কমিটি থেকে সরে দাঁড়ানোয়, তার ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, শীর্ষ আদালত কমিটিকে কৃষকদের আপত্তি ও সরকারের বক্তব্য শুনে দু’মাসের মধ্যে সুপারিশ জানাতে বলেছিল। তার জন্যই কৃষি আইনের রূপায়ণে স্থগিতাদেশ জারি করেছে তারা। এখন সদস্য হিসেবে নতুন কোনও নাম সন্ধান করতে হবে।
আইনজীবীদের একাংশের মতে, প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের তৈরি কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছিল। এ বার তার এক সদস্য নিজেই সরে দাঁড়ানোয় তা শীর্ষ আদালতের অস্বস্তির কারণ হল।
ভূপেন্দ্র বিবৃতিতে বলেছেন, সদস্য হিসেবে নিয়োগের জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু এক জন কৃষক ও কৃষক সংগঠনের নেতা হিসেবে তিনি চাষি ও পঞ্জাবের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান। কৃষক সংগঠনগুলির ভাবনা ও সংশয় দেখেই তিনি কমিটি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন।
ভূপেন্দ্রর সরে দাঁড়ানোর পরে কৃষক নেতাদের একাংশের দাবি, কমিটির আর এক সদস্য অনিল ধনওয়াতও সরে দাঁড়ান। তিনি মহারাষ্ট্রের ক্ষেতকারী সংগঠনের নেতা। তবে ধনওয়াত জানিয়েছেন, তিনি সরবেন না।
ধনওয়াতও কৃষি আইনের পক্ষে আগে সওয়াল করেছেন। কিসান সমন্বয় কমিটির মঞ্চ থেকে কৃষিমন্ত্রীকে চিঠি লিখে দাবি জানিয়েছেন তিন আইন প্রত্যাহার না-করতে। কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘আন্দোলনের চাপে কমিটির সদস্যরা পালাতে চাইছেন।’’
স্থগিতাদেশ জারির সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনস্থল থেকে বয়স্ক, শিশু ও মহিলাদের সরে যেতে আর্জি জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে। আইনজীবীদের বোঝানোর দায়িত্ব দিয়ে বলেছেন, ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আদালত নির্দেশ জারি করতে পারে। আজ এর প্রতিবাদে ৮০০ জন মহিলা কৃষক ও পড়ুয়া তাঁকে খোলা চিঠি লিখেছেন। বক্তব্য, বোবডে কৃষক আন্দোলনে মহিলাদের ভূমিকার অবমাননা করেছেন। কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে তাঁরা বহু দিন লড়ছেন। তারও অসম্মান করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
কমিটি গঠনের আগেই ঠিক হয়েছিল, ১৫ জানুয়ারি কেন্দ্রের সঙ্গে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলির বৈঠক হবে। এর আগে আট দফা বৈঠকে সমাধানসূত্র বার হয়নি। কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর জানান, ‘‘সরকার খোলা মনে আলোচনার জন্য তৈরি। নির্ধারিত সময়েই বৈঠক হবে।’’ তাঁর আশা, ইতিবাচক সমাধান মিলবে।
কৃষি মন্ত্রক সূত্রে খবর, বৈঠকে মন্ত্রীরা কৃষক নেতাদের কমিটির সামনে আপত্তি জানাতে বলবেন। কিন্তু চাষিদের আইন প্রত্যাহারের দাবিতেই অনড় থাকার সম্ভাবনা।
এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের বক্তব্য, ‘‘কৃষক নেতাদের সঙ্গে আমি একমত যে, কমিটির সামনে আলোচনায় ফল মিলবে না। প্রকৃত অর্থে নিরপেক্ষ কাউকে কমিটিতে নিলে ভাল হত।’’
আগামিকাল কংগ্রেস দেশ জুড়ে রাজভবন ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছে। রাহুল গাঁধী আজ মাদুরাইয়ে বলেন, ‘‘মোদী সরকার কৃষকদের শেষ করার ষড়যন্ত্র করছে। কারণ, তারা চাষিদের জমি, ফসল বন্ধু শিল্পপতিদের হাতে তুলে দিতে চায়।’’