কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে বিশিষ্টজনদের ডাকে সমাবেশ। বারাকপুর সুকান্ত সদনে। নিজস্ব চিত্র।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে চলতি কৃষক প্রতিবাদ যে চেহারা নিয়েছে, স্বাধীনতার পরে এমন ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আন্দোলন আর হয়নি, এমনই দাবি উঠে এল জোড়া সভায়। আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানালেন বিশিষ্ট জনেরা। আর আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা হান্নান মোল্লা দুই সভায় দাঁড়িয়েই শহরের মানুষের কাছে আহ্বান জানালেন আরও বেশি করে কৃষকদের সমর্থনে এগিয়ে আসার।
ব্যারাকপুর সুকান্ত সদনে রবিবার বিদ্বজ্জন ও সাংস্কৃতিক জগতের আয়োজনে সভা ছিল কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে। সেখানে নাট্যকার চন্দন সেন, কৌশিক সেনদের পাশাপাশিই উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের দুই পলিটব্যুরো সদস্য হান্নান ও মহম্মদ সেলিম, বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য, রমলা চক্রবর্তী প্রমুখ। শঙ্খ ঘোষ এবং বিভাস চক্রবর্তীর সংহতি-বার্তা পড়ে শোনানো হয় সভায়। কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কৌশিক বলেন, সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে প্রধান শত্রু চিহ্নিত করেই সকলে লড়াইয়ে নামবেন, এটাই প্রত্যাশিত। তার আগে মান্নান বলেন, ফ্যাসিবাদী একটা সরকার কৃষকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সেলিম বলেন, কৃষক আন্দোলন যে পথ দেখিয়ছে, তার সূত্র ধরে লড়াই আরও জোরালো করতে হবে। তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘শক্র’ চিনতে বামপন্থীদের ভুল হচ্ছে না!
পরে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে সিপিএমের দলীয় মুখপত্রের ৫৫তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানেও বিশেষ আলোচনা ছিল কৃষক প্রতিবাদ নিয়ে। সেখানেও প্রধান বক্তা ছিলেন কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান। দুই সভাতেই তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ ভাবে কোনও আন্দোলন ৭-৮ দিন গড়ালেই তার মধ্যে দু-তিন রকম মত তৈরি হয়। কিন্তু প্রায় ৫০০ কৃষক সংগঠন একসঙ্গে এত দিন ধরে ঐক্যবদ্ধ এবং এমন শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, এই ঘটনা ঐতিহাসিক। স্বাধীনতার পরে এমন আন্দোলন আর হয়নি। মোদী সরকারকে নতিস্বীকার করতে বাধ্য না করে আমরা থামব না।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আজ, সোমবার কৃষকদের ফের আলোচনা। সেখানে যোগ দিতে দিল্লি ফিরবেন হান্নান। তার আগে এ দিন তিনি জানান, সব জেলায় ৬ থেকে ২০ জানুয়ারি প্রতিবাদ হবে। বিভিন্ন রাজ্যের রাজভবনে প্রতিবাদ জানানো হবে আগামী ২৩ থেকে ২৫ জানুয়ারি। কৃষি আইন প্রত্যাহারের পথে কেন্দ্র না গেলে আগামী ২৬ জানুয়ারি সরকারি কুচকাওয়াজের পরে সব রাজ্যে রাজধানীর দিকে প্যারেড করে এগোবেন কৃষকেরা। হান্নানের কথায়, ‘‘উৎপাদনকারী কৃষককে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাপারী বানাতে চাইছে! কৃষকেরা তা মানতে নারাজ। সরকারের নানা অপপ্রচারের মধ্যেও তাঁরা রাস্তায় থেকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে তৈরি।’’ ক্ষমতায় আসার আগে কৃষকদের নিয়ে মোদী যা যা ঘোষণা করেছিলেন, সরকারে এসে তার সম্পূর্ণ উল্টো কাজ করেছেন বলেও তাঁর অভিযোগ।