লালকেল্লায় কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী। ছবি: পিটিআই।
প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের রাতেই কৃষক আন্দোলনের রাশ চলে গিয়েছিল কট্টরবাদীদের হাতে এবং সেই কারণেই ট্র্যাক্টর মিছিল বেলাগাম হয়ে রাজধানী জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে বলে দিল্লি পুলিশের দাবি।
আজ সাংবাদিক সম্মেলনে দিল্লি পুলিশের কমিশনার এস এন শ্রীবাস্তব জানান, শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন হবে বলে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন কৃষক নেতারা। কিন্তু তা না-হওয়ায় স্বাক্ষরকারী সমস্ত কৃষক নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লালকেল্লায় পতাকা-কাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত দীপ সিধু ও তাঁর ডান হাত হিসেবে পরিচিত লাখা সিধানার বিরুদ্ধে আজই এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। অন্য দিকে জানা গিয়েছে, গাজিপুর সীমানায় রাতে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গিয়েছে জলকামানও। এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আশঙ্কা, জোর করেই আন্দোলন তুলে দিতে চায় পুলিশ।
গত কালের ঘটনায় আজ রাত পর্যন্ত ২৫টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হয়েছেন ১৯ জন। আটক ৫০ জন। ধৃতদের বিরুদ্ধে বেআইনি জমায়েত, সরকারি কর্মচারীকে কাজে বাধা ও প্রাণে মারার চেষ্টা, ডাকাতি, অস্ত্র নিয়ে জমায়েত হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত কাল উত্তেজিত জনতাকে সামলাতে আহত হয়েছেন ৩৯৪ জন পুলিশ। যাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন আইসিইউ-তে ভর্তি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।
এ দিকে পুলিশ কমিশনারের বক্তব্যের ভিত্তিতেই কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, ২৫ জানুয়ারি রাতেই যখন পুলিশের কাছে ঝামেলা হওয়ার খবর ছিল, তখন মিছিল করার ছাড়পত্র দেওয়া হল কেন? কেনই বা সকালে তা বন্ধ করা হল না? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে মুখ খুলে সুরজেওয়ালার অভিযোগ, ‘‘দিল্লিতে হাঙ্গামা রুখতে ব্যর্থ অমিত শাহের ইশারায় দিল্লি পুলিশ হাঙ্গামাকারীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার বদলে সংযুক্তি কিসান মোর্চার নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। এতেই হাঙ্গামাকারীদের সঙ্গে বিজেপি সরকারের আঁতাঁত ও ষড়যন্ত্র স্পষ্ট।’’ শাহের ইস্তফাও দাবি করেছে কংগ্রেস।
ট্র্যাক্টর মিছিল ও অশান্তির পরের দিন দিল্লির টিকরি সীমানায় বিক্ষোভে বক্তব্য রাখছেন গায়ক কানওয়ার গ্রেওয়াল। বুধবার। ছবি: পিটিআই।
আজ প্রথমে দুপুর আড়াইটের সময় সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা ছিল দিল্লি পুলিশের। শেষ পর্যন্ত রাত আটটায় সাংবাদিক সম্মেলন করেন শ্রীবাস্তব। বলেন, কৃষক নেতাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল তাঁরা নির্দিষ্ট রুটেই মিছিল করবেন। তার বাইরে বেরোবেন না। মিছিল হওয়ার কথা ছিল বেলা বারোটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত। কিন্তু সকাল সাড়ে ছ’টা থেকেই মিছিলের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। ঠিক ছিল মিছিলে কেবল পাঁচ হাজার ট্র্যাক্টরই থাকবে। কিন্তু বাস্তবে কয়েক গুণ বেশি ট্র্যাক্টর যোগ দেয়। কৃষক নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মিছিলে কোনও অস্ত্র থাকবে না। কিন্তু উপস্থিত একাধিক ব্যক্তির হাতে তরোয়াল, লাঠি ছিল। বন্দুকও দেখা গিয়েছে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, অস্ত্র-সহ উপস্থিতির পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই মিছিল শুরু করে দেন কৃষকেরা। সিংঘু, টিকরি ও গাজিপুর— এই তিনটি এলাকা থেকে যে মিছিল বার হয়েছিল, তার প্রত্যেকটির ব্যারিকেড ভাঙা হয়। সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়ে ট্র্যাক্টর মিছিল। পুলিশ কমিশনার বলেন, প্রতিটি মিছিলই বিশ্বাসভঙ্গ করেছে। তাই যে নেতারা চুক্তি ভেঙেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশেষ করে অভিযোগ উঠেছে কৃষক নেতা দর্শন পাল সিংহ ও সতনাম সিংহ পন্নুর বিরুদ্ধে। পুলিশের অভিযোগ, মুবারক চক থেকে তাদের ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। পরিবর্তে সেখানে উপস্থিত কৃষকদের ব্যারিকেড ভাঙার জন্য প্ররোচনামূলক ভাষণ দেন ওই দুই নেতা। পুলিশ কমিশনার সতনামের প্ররোচনামূলক বক্তব্যের ভিডিয়ো ফুটেজও তুলে ধরেন। যদিও সতনাম নিজে দাবি করেন, তিনি কোনও প্ররোচনা দেননি এবং তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে লাল কেল্লায় গন্ডগোলের কোনও সম্পর্কও নেই।
গোড়া থেকেই পুলিশ দাবি করে আসছে, ট্র্যাক্টর মিছিলে অশান্তি বাধাতে একাধিক নাশকতামূলক শক্তি সক্রিয় ছিল, যাদের পিছন থেকে মদত দিচ্ছিল পাকিস্তান। আজ পুলিশ কমিশনার বলেন, ২৫ জানুয়ারির রাতে অন্তত ৩০৮টি বিদেশি টুইটার হ্যান্ডল গন্ডগোল পাকাতে সক্রিয় ছিল। শ্রীবাস্তবের দাবি, ২৫ জানুয়ারির রাতেই আন্দোলন মঞ্চের দখল নিয়ে নেয় কট্টরপন্থীরা। তাদের লক্ষ্যই ছিল ঝামেলা পাকানো।