ক্রেনে কংক্রিটের চাঙড় নামিয়ে কৃষকদের পথ আটকানোর চেষ্টা। ছবি: পিটিআই।
আন্দোলনকারী কৃষকদের ক্ষোভ সামলাতে আজ সরাসরি আলোচনায় বসলেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু তিনটি বিতর্কিত আইন প্রত্যাহারে সরকার রাজি না হওয়ায় অনড় রইলেন কৃষক নেতারাও। ফলে দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠকে সমাধানসূত্র অধরাই রইল।
এর জেরে আগামিকাল মোদী সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে কৃষক নেতাদের নির্ধারিত বৈঠক হচ্ছে না বলে কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা রাতে জানান। কারণ, সরকার প্রস্তাব দিয়েছে, কৃষক নেতারা আগে আলোচনা করে নিন। তার পরে বৃহস্পতিবার বৈঠক হোক। জানা গিয়েছে, আগামিকাল বেলা ১১টার মধ্যে সরকার প্রস্তাব জানিয়ে চিঠি পাঠাবে। তার পর সিংঘু সীমানায় বেলা ১২টায় বৈঠক করবেন কৃষক সংগঠনের নেতারা।
তবে বৃহস্পতিবারও কৃষক সংগঠনের নেতারা আদৌ বৈঠকে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন হান্নান। তিনি বলেন, ‘‘সরকার গত পাঁচটি বৈঠক ধরে একই কথা বার বার বলছে। অমিত শাহকে আমরা বলেছি, নতুন কথা বলুন। একই কথা আওড়ে কী লাভ? দেখা যাক, সরকার কী লিখিত প্রস্তাব দেয়। আমরা পরের বৈঠকে যোগ দেব কি না, তা কালই ঠিক হবে। তবে এর সম্ভাবনা কম।’’
আরও পড়ুন: আজ বৈঠকে বিরোধীরা, যাবেন রাষ্ট্রপতির কাছেও
আরও পড়ুন: বিদ্রোহের গর্ভগৃহে প্রাণ গেল আরও দুই কৃষকের, শোক নিয়েই চলছে বন্ধ
সরকার এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিল, এপিএমসি-র বাইরে থাকা মান্ডিতেও সমান কর, ফসল কেনার আগে ব্যবসায়ীদের নথিভুক্তি, চুক্তি চাষে বিবাদে কর্পোরেট সংস্থার বিরুদ্ধে কৃষকদের আদালতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে সরকার আইনে সংশোধন করতে রাজি। সরকারি ফসল কেনায় এমএসপি-র নিশ্চয়তা দিতেও সরকার তৈরি। কিন্তু কৃষক নেতারা আগের বৈঠকেই সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন। ওই তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতেই তাঁরা অনড়।
প্রতিবাদ: দিল্লি-হরিয়ানার সিংঘু সীমানায় কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের সমাবেশ। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
আজ দুপুরে, কৃষক সংগঠনগুলির ডাকা ভারত বন্ধের মধ্যে আচমকাই কৃষক নেতাদের মোবাইলে অমিত শাহের দফতর থেকে ফোন আসে। সন্ধ্যা সাতটায় দিল্লির কৃষ্ণ মেনন মার্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হয়। কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে কৃষকদের দিল্লি ঘেরাওয়ের পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই প্রথম নিজেই কৃষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন। এত দিন তাঁর সঙ্গে আলোচনা করার পর কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর, খাদ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসছিলেন। এ বার শাহ নিজেই আসরে নেমে পড়ায় জল্পনা শুরু হয়, সরকার কি কৃষকদের চাপে তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে চলেছে? বৈঠকেই বোঝা যায়, তেমন কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই।
আর বৈঠকে কৃষক নেতারাও জানিয়ে দেন, তাঁরা তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় থাকছেন। হান্নান বলেন, ‘‘সরকার আইন প্রত্যাহার করতে নারাজ। এত দিন ধরে আইনে যে সব সংশোধনের কথা মন্ত্রীরা বলেছেন, সে সবই সরকার ফের আওড়েছে।’’ বৈঠকের আগেই অবশ্য কৃষক নেতারা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করা, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি নিশ্চিত করার দাবি মানা হবে কি না, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর থেকে শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ শুনতে চাইবেন তাঁরা।
শাহের এই হঠাৎ-আমন্ত্রণ নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। আমন্ত্রণ আসার পরেই কৃষক সংগঠনের নেতাদের মধ্যে আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে, সরকার তাঁদের ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সব কৃষক নেতার কাছে শাহের আমন্ত্রণ পৌঁছনোর আগেই ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের টিকায়েত গোষ্ঠীর নেতা রাকেশ টিকায়েত জানিয়ে দেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ডাকে সন্ধ্যা সাতটায় বৈঠক হচ্ছে। এই টিকায়েত গোষ্ঠীর সঙ্গে এর আগেই সরকারি তরফে আলাদা ভাবে কথা বলা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, এত দিন কৃষক সংগঠনের ৩৫ থেকে ৪০ জন নেতা সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসছিলেন। এ দিন মাত্র ১৩ জন কৃষক নেতা বৈঠকে যোগ দেন।
তবে বৈঠকে গেলেও অনেক নেতাই শাহের বাসভবনে বৈঠকে যেতে রাজি হননি। ঠিক হয়, পুসার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ-এর অতিথিশালায় বৈঠক হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন থেকে কৃষক নেতাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন (উগ্রহণ)-এর নেতা যোগীন্দ্র সিংহ কৃষক নেতাদের এই ভাবে বেছে বেছে বৈঠকে ডাকা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। পঞ্জাবের অন্যতম শক্তিশালী এই সংগঠন একার জোরেই দিল্লি-হিসার জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিল। তা সত্ত্বেও তাঁদের বৈঠকে কেন ডাকা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কৃষক সংগঠনগুলি দিল্লিতে ঢোকার সড়ক অবরোধ শুরু পরে সরকারের তরফে প্রস্তাব ছিল, তাঁরা বুরারির সরকার-নির্দিষ্ট ময়দানে বিক্ষোভ দেখান। কিন্তু কৃষকরা তাতে রাজি হননি। আজ কিন্তু পঞ্জাব কিসান ইউনিয়নের নেতা রুলদু সিংহ মানসা বলেছেন, তাঁদের দিল্লির রামলীলা ময়দানে বিক্ষোভ দেখাতে দেওয়া হোক। তাঁরাও আমজনতার ভোগান্তি চাইছেন না।