—ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো ১৮ হাজার টাকা মিলল না। তবে ২ হাজার টাকাও নয়। পিএম-কিসান প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৭ লক্ষ কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে শুক্রবার মাথা পিছু ৪ হাজার টাকা করে জমা হল।
এ দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে বোতাম টিপে দেশের প্রায় ৯.৫০ কোটি কৃষকের অ্যাকাউন্টে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাঠিয়েছেন। বাকি সব রাজ্যের কৃষকই চলতি অর্থ বছরের প্রথম কিস্তির ২ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। কিন্তু রাজ্যের ৭ লক্ষ ৩ হাজার ৯৫৫ জন কৃষকের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ৪ হাজার টাকা করে। সর্বসাকুল্যে প্রায় ২৮১ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ বাংলার কৃষকরা প্রথম বার এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। এরপর রাজ্য থেকে কৃষকদের নাম যেমন মিলবে, সংখ্যা তেমন বাড়তে থাকবে।”
পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা বেশি টাকা পেলেন কেন?
কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, পিএম-কিসানে চার মাস অন্তর ২ হাজার টাকা করে তিন কিস্তিতে ৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়। আজ এপ্রিল-জুলাইয়ের ২ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের কাগজপত্র এপ্রিলের আগেই এসে গিয়েছিল। তাই আগের চার মাস, অর্থাৎ ডিসেম্বর-মার্চের কিস্তির টাকাও দেওয়া হয়েছে।
রাজনীতিকরা অবশ্য একে প্রধানমন্ত্রীর ‘সান্ত্বনা পুরস্কার’ বলে কটাক্ষ করছেন। কারণ, তিনিই পশ্চিমবঙ্গের ভোটের প্রচারে গিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যের কৃষকরা পিএম-কিসানে যোগ দিলে গত তিন বছরের বকেয়া ১৮ হাজার টাকাও পাবেন। প্রকল্পের নিয়ম মাফিক তা দেওয়া যাবে না বুঝে গতকালই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষকদের লেখা খোলা চিঠিতে বলেছিলেন, ‘আপনাদের প্রাপ্য ছিল ১৮ হাজার টাকা। কিন্তু পাচ্ছেন অনেক কম। এইটুকুও পেতেন না যদি না আমরা আপনাদের হয়ে লড়াই করতাম।’ বকেয়া আদায়ের জন্য তাঁর লড়াই চলবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। তৃণমূল নেতাদের দাবি, মমতার এই চাপের মুখেই বাড়তি ২ হাজার টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। আজ মুখ্যমন্ত্রীর অধীন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরও বলেছে, মুখ্যমন্ত্রীর দাবিতেই কৃষকরা পিএম-কিসানের টাকা পেলেন। কৃষকদের জন্য লড়াই চলবে।
তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘রাজ্য সরকারের বিরোধিতার জন্যই রাজ্যের প্রায় ৭০ লক্ষ কৃষক এত দিন পিএম-কিসানের টাকা পাননি। কেন্দ্রের বার বার তাগাদার পরে এখন মাত্র ৭ লক্ষ কৃষক পিএম-কিসানের টাকা পেলেন। আশা করি, তৃণমূলে আনুগত্যের জন্য এই ৭ লক্ষকে বেছে নেওয়া হয়নি এবং ভবিষ্যতে রাজ্যের সকলেরই নাম পিএম-কিসানের জন্য কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “ভোটে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে কৃষকদের চিঠি লিখেছেন, তার মধ্যে রাজনীতির গন্ধ রয়েছে।” কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর বলেন, “এত দিন পশ্চিমবঙ্গের অনুপস্থিতির জন্যই বলা যেত না যে দেশ জুড়ে পিএম-কিসান চালু হয়েছে। খুশির খবর হল, এ বার পশ্চিমবঙ্গের চাষিরাও টাকা পাবেন।’’
আজ পিএম-কিসানের অনুষ্ঠানে বেশ কিছু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী, আমলারা হাজির ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী একাধিক রাজ্যের কৃষকদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে আলাপচারিতাও করেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কেউ হাজির ছিলেন না। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, এই অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের কাছে আমন্ত্রণ আসেনি।