ট্র্যাক্টরেই খড় বিছিয়ে ঘুম এক কৃষক-সন্তানের। বুধবার গাজিয়াবাদের বিক্ষোভস্থলে। রয়টার্স
বৈঠকে বসার দরজা খোলা রাখার কথা বার বার বলছে কৃষি মন্ত্রক। চাষিদের ক্ষোভের ক্ষতে প্রলেপ দিতে বড়দিনে ছয় রাজ্যের ন’কোটি কৃষকের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁদের জন্য ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি প্রকল্পের পরবর্তী কিস্তির ১৮ হাজার কোটি টাকা বণ্টনের কথাও। কিন্তু এই সমস্ত কিছুর পরেও দিল্লি সীমানায় বসে থাকা প্রতিবাদী চাষিরা কেন্দ্রের আলোচনার প্রস্তাব তো ফেরালেনই, সঙ্গে নিজেদের চিঠিতে উগরে দিলেন তীব্র ক্ষোভ। রাজধানীতে হাড়কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যেও তাই কৃষক আন্দোলনের পারদ চড়া অব্যাহত।
রবিবার চিঠি দিয়ে আন্দোলনরত কৃষক সংগঠনগুলিকে ফের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিল মন্ত্রক। কিন্তু বুধবার ৪৭২টি কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা (সংযুক্ত কৃষক মোর্চা) বৈঠকের পরে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন। সেই সঙ্গে পাল্টা চিঠিতে তোপ দাগলেন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। সেখানে অভিযোগ, ‘কৃষক সংগঠনগুলিকে বদনাম করতে চাইছে কেন্দ্র। শান্তিপূর্ণ ভাবে যে আন্দোলন চলছে, তাকে হচ্ছে। খাটো করার চেষ্টা হচ্ছে এলাকাভিত্তিক বলে দাবি করে।’
চিঠিতে চাষিদের বক্তব্য, ‘কিছু কাগুজে কৃষক সংগঠনের সঙ্গে আলাদা করে আলোচনায় বসে সরকার দেখাতে চাইছে যে, কৃষকেরা এই আইনকে সমর্থন করে।’ সংগঠনগুলির মধ্যে চেষ্টা হচ্ছে ‘রাজনৈতিক বিভাজন’ তৈরির। এই সমস্ত কারণে বাধ্য হয়ে আন্দোলন আরও তীব্র করার সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে তারা। অবস্থানে অনড় থেকে তাঁরা জানিয়েছেন, ‘আইন সংশোধন নয়। একমাত্র দাবি, নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহার।’ এই প্রবল ক্ষোভের আঁচের মধ্যেই বড়দিন তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনে (২৫ ডিসেম্বর) কৃষকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করতে চলেছেন মোদী। সেখানে বাছাই কিছু কৃষকের সঙ্গে কথাও বলবেন তিনি। কৃষকদের বোঝাতে দেশজুড়ে ১০০টি সাংবাদিক বৈঠক ও ৭০০টি সভা করার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র। বিলি করা হবে কৃষিমন্ত্রীর খোলা চিঠিও।
আরও পড়ুন: ফিউচারকে নিয়ন্ত্রণে অ্যামাজনের প্রচেষ্টা আইন ভাঙার শামিল: আদালত
আরও পড়ুন: ফের কমল সংক্রমণের হার, আশঙ্কা জাগাচ্ছে কলকাতায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ক্ষোভ এমন পাহাড়প্রমাণ, যে আইন প্রত্যাহার ছাড়া ক্ষোভ প্রশমিত হওয়া শক্ত। কৃষক নেতাদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের তরফ থেকে আগেই খারিজ করা প্রস্তাব ঘুরিয়ে এনে আলোচনায় বসতে বলবেন না। খোলা মনে, সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বৈঠকে বসুন। আমরা কথা বলতে তৈরি।’’ কেন্দ্র এমএসপি সংক্রান্ত যে সংশোধনী লিখিত ভাবে দিতে রাজি হয়েছিল, সেটিতেও গলদ রয়েছে বলে সংযুক্ত কৃষক মোর্চার দাবি। অভিযোগ, ওই এমএসপিতে চাষের সমস্ত খরচ ধরাই হয়নি।
কেন্দ্রের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে রাষ্ট্রীয় কিসান মহাসঙ্ঘের সভাপতি কাক্কার অভিযোগ, “এই আইন এনে কেন্দ্র দেশকে পঙ্গু করতে চায়।’’ সর্ব ভারতীয় কিসান সভার নেতা হান্নান মোল্লার কথায়, “আমরা সিংঘুতে বেড়াতে আসিনি। সমাধান চাই।... সরকার ভাবছে কৃষকরা ক্লান্ত হয়ে ফিরে যাবেন। কিন্তু আমরা অম্বানী, আদানির পণ্য বয়কটের ডাক দেব।’’