সভায় মালা দিয়ে সংবর্ধনা কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতকে। ছবি— পিটিআই।
আন্দোলন প্রত্যাহার তো নয়ই, লখনউয়ের মহাপঞ্চায়েত থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই আজ তীক্ষ্ণ ভাষায় আক্রমণ করল কৃষক সংগঠনগুলি। তাঁদের অভিযোগ, কৃষকদের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা চালাচ্ছেন মোদী। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) আইনি নিশ্চয়তা-সহ আরও কিছু দাবি সামনে রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কৃষক নেতারা।
উত্তরপ্রদেশে ভোটের মুখে সংযুক্ত কিসান মোর্চার মহাপঞ্চায়েতে আজ ব্যাপক জনসমাগম হয়েছে। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে বলেন, ‘‘ওঁরা এক বছর পর বুঝলেন এই আইনগুলি জনস্বার্থ বিরোধী। ফলে কৃষি আইনগুলি প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেছেন। সরকারের তরফে এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই ঘোষণার সময়ে (মোদী) যুক্তি দিয়েছেন, আইনগুলি নিয়ে কিছু মানুষকে বোঝাতে পারেননি। আমরাই সেই কিছু মানুষ। আসলে এ সব বলে কৃষকদের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা করা হয়েছে।’’ এমএসপি-র আইনি নিশ্চয়তার দাবি নিয়ে আজ সরাসরি মোদীর কোর্টেই বল ঠেলে দিয়েছেন টিকায়েত। তাঁর দাবি, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তার প্রস্তাব প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের হাতে তুলে দিয়েছিল যে কমিটি, তার নেতৃত্বে ছিলেন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টিকায়েত বলেন, ‘‘মোদীকে এখন দেশের সামনে স্পষ্ট জবাব দিতে হবে তিনি ওই কমিটির প্রস্তাবগুলি মেনে নেবেন কি না।’’ কৃষক নেতার কথায়, ‘‘কমিটির রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর দফতরেই পড়ে রয়েছে। নতুন কোনও কমিটি গড়ার প্রয়োজন নেই। মানুষের অত সময়ও নেই।’’ এ সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে টিকায়েতের মন্তব্য, ‘‘দেশের সামনে কেউ ক্ষমা চাইলেই কৃষকেরা ফসলের ন্যায্য দাম পেয়ে যাবেন না। সরকারের সঠিক নীতির ফলেই সেটা হতে পারে।’’
লখনউয়ের মহাপঞ্চায়েত থেকে কৃষক সংগঠনের নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের বকেয়া দাবিগুলি মেনে না নিলে আন্দোলন থেকে সরে আসার প্রশ্নই নেই। এই দাবিগুলি হল— চাষের মোট খরচের দেড়গুণ এমএসপি-র জন্য আইনি নিশ্চয়তা, বিদ্যুৎ আইনের সংশোধনী বিল প্রত্যাহার, খড় পোড়ানো রোখার আইন থেকে কৃষকদের শাস্তি-জরিমানার ব্যবস্থা প্রত্যাহার, আন্দোলনের জেরে বিভিন্ন রাজ্যে কৃষকদের উপর করা মামলাগুলি তুলে নেওয়া, মৃত কৃষকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও লখিমপুর খেরি কাণ্ডে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্রের ইস্তফা। টিকায়েত বলেন, ‘‘আমরা পিছু হটছি না। সরকার সংঘর্ষ বিরতির কথা ঘোষণা করেছে, কৃষকেরা করেননি। কৃষি আইন ছাড়াও আমাদের অন্য দাবি-দাওয়া রয়েছে।’’ নাম না করে মোদীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ওঁদের বোঝাতে এক বছর সময় লেগে গেল। আমরা নিজেদের ভাষায় কথা বলি। কিন্তু দিল্লিতে বিলাসবহুল বাংলোয় বসে রয়েছেন যাঁরা, তাঁদের ভাষা আলাদা।’’ দেশের মানুষকে কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে টিকায়েতের মন্তব্য, ‘‘ওঁরা হিন্দু-মুসলিম, হিন্দু-শিখ, জিন্নার কথা বলে আপনাদের জড়িয়ে রাখবে। আর দেশকে বিক্রি করে দেবে।’’ লখনউয়ের মহাপঞ্চায়েতের মঞ্চে লখিমপুর খেরির নিহত কৃষক পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
লখনউয়ের সভা থেকে সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতারা যখন মোদী সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তখনই দিল্লিতে কৃষি আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের গঠিত কমিটির সদস্য অনিল জে ঘনওয়ত জানিয়েছেন, আইনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার পরেই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন রিপোর্ট প্রকাশ করবেন কি না। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের কাছে ঘনওয়ত আজ দাবি করেছেন, কমিটির বাকি দুই সদস্য, অশোক গুলাটী ও প্রমোদকুমার জোশী এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তাঁর উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে বাকি সদস্যদের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। রিপোর্টটি প্রকাশ করার আর্জি জানিয়ে সেপ্টেম্বর মাসেই প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখেছিলেন ঘনওয়ত। তবে এখনও পর্যন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসেনি।