মা-মেয়ের চোখের জলে মুছল সীমান্ত

পনেরো বছর মা-মেয়ের দেখা হয়নি। পাসপোর্ট ছিল না কারওরই। লোকমুখে শুনেছিলেন, আখাউড়া চেকপোস্টে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিটিং রিট্রিট দেখতে নাকি অনেক মানুষ জড়ো হয়!

Advertisement

বাপি রায়চৌধুরী

আগরতলা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৫:১৪
Share:

পুনর্মিলন: সীমান্তে মা-মেয়ে মুখোমুখি। নিজস্ব চিত্র

সীমান্তের বেড়াই তাঁদের দূরে সরিয়ে রেখেছিল। সীমান্তেই মিলন হল ফের।

Advertisement

পনেরো বছর মা-মেয়ের দেখা হয়নি। পাসপোর্ট ছিল না কারওরই। লোকমুখে শুনেছিলেন, আখাউড়া চেকপোস্টে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিটিং রিট্রিট দেখতে নাকি অনেক মানুষ জড়ো হয়! তখন নাকি সেনাবাহিনীকে বলেকয়ে দেখা করা যেতে পারে!

মঙ্গলবার চেকপোস্টের পিলার ধরে প্রৌঢ়া লক্ষ্মীরানি পালের চোখের জল আর বাঁধ মানে না। সঙ্গে রয়েছেন তাঁর আরও দুই মেয়ে। তাঁরাও থামাতে পারছেন না মা-কে। এ পারে বসে তখন চোখ মুছছেন বোন কানন পাল। মা-বোনেদের সঙ্গে দেখা হওয়ার অধীর অপেক্ষা তাঁরও।

Advertisement

লক্ষ্মীরানির বাড়ি বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার চুন্টা এলাকায়। ছয় মেয়ে ওঁর। পাঁচ মেয়ের বিয়ে হয়েছে বাংলাদেশে। শুধু কাননের শ্বশুরবাড়ি ত্রিপুরায়। প্রায় পনেরো বছর দেখা হয়নি ওঁদের। লক্ষ্মীরানির পাসপোর্ট নেই। তিনি এ পারে আসতে পারেন না। কাননেরও পাসপোর্ট নেই। তিনিও যেতে পারেন না। ফোনেই যা কিছু কথা হয় দু’জনের!

এরই মধ্যে লক্ষ্মীরানি শুনতে পেয়েছেন চেকপোস্টে বিটিং রিট্রিট অনুষ্ঠানের পরে মানুষ একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে পারে। কাননকে তিনিই ফোন করে খবর দেন। ঠিক হয়ে যায়, আজ ওঁরা সবাই জড়ো হবেন সীমান্তে। কাননের বাড়ি আগরতলার নন্দননগর এলাকায়। সীমান্ত থেকে কাছেই। ও দিকে লক্ষ্মীরানির সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আরও দুই মেয়েও চলে আসেন বোনের সঙ্গে দেখা করার জন্যে। দু’পারে দু’পক্ষ বসে অপেক্ষা করতে থাকেন, অনুষ্ঠানের পরে কথা বলতে পারার আশায়।

দু’পারে তখন এক অদ্ভুত দৃশ্য! দু’দেশের সীমান্তরক্ষীরা তাঁদের কসরত দেখাচ্ছেন। তারই ফাঁক দিয়ে আকুল চোখে চেয়ে রয়েছেন মা আর মেয়েরা। একে অপরকে দেখতে দেখতে কিছু ক্ষণ পরপর কাপড় দিয়ে চোখের জল মুছে নিচ্ছেন।

অনুষ্ঠান শেষ হতেই সীমান্তের পিলার ধরে হু হু করে কেঁদে ফেললেন মা। তা দেখে অন্য দর্শকদেরও তত ক্ষণে চোখে জল এসে গিয়েছে। কিন্তু বিএসএফ-এর আদেশ না পেলে তো মায়ের কাছে যেতে পারেন না মেয়ে! বাঁচোয়া এই যে, এখানকার সীমান্তে উত্তেজনা তেমন নেই। দু’দেশের বাহিনীর মধ্যেও সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক। রক্ষীদের উপস্থিতিতেই শেষ পর্যন্ত কাছে এলেন ওঁরা। বিকেলের আলোয় জমে থাকা আবেগের পাহাড় ভাঙল পনেরো বছর পর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement