দিল্লি হাই কোর্টের নির্দেশ ফাইল চিত্র
গত বছর এপ্রিলে করোনার মধ্যে দিল্লির নিজামুদ্দিন মরকজে তবলিগি জামাত সম্প্রদায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ঘিরে হইচই শুরু হওয়ার পরে পুলিশ এই সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু মৌলানা মহম্মদ সাদ কন্দলভির বাসস্থানে তালা ঝুলিয়ে দেয়। বিস্তর আবেদন-নিবেদন, আইন-আদালতের পরে সোমবার দিল্লি হাই কোর্টের নির্দেশে নিজের বাড়িতে সপরিবার বসবাসের নির্দেশ পেলেন মৌলানার বর্ষীয়ান মা। মৌলানার বাসস্থান তালাবন্ধ করে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশকে রীতিমতো ভর্ৎসনা করেছে হাই কোর্ট। তবে আবেদনকারীকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আবাসিক অংশটি ছাড়া অন্য অংশ যেন তাঁরা ব্যবহার না করেন।
নিজামুদ্দিন মরকজে তবলিগি সম্প্রদায়ের একটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা এবং সংলগ্ন আবাসনে মৌলবির পরিবারের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। থানার সঙ্গে এক পাঁচিলে অবস্থিত এই মরকজে দীর্ঘদিন ধরে প্রচারের পরে সম্মেলনটি শুরু হওয়ার আগেই পুলিশ কেন তা বন্ধে সচেষ্ট হয়নি, সেই প্রশ্ন উঠেছিল। সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পরে অতিসক্রিয় হয়ে ধরপাকড় শুরু করে দিল্লি পুলিশ। বলা হয়, এই সম্মেলনের ফলেই দিল্লিতে করোনা সংক্রমণ ছাড়িয়ে পড়ছে। মৌলানা সাদ-সহ দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিদের আটক করে মামলা শুরু করা হয়। একই সঙ্গে মৌলানার পরিবারকে বার করে দিয়ে তালাবন্ধ করে দেওয়া হয় গোটা মরকজ।
বিচারপতি যোগেশ খন্না এ দিন বিস্ময় প্রকাশ করে পুলিশকে প্রশ্ন করেন, “কেন এটা করা হল? নিজের বাড়ি ছেড়ে একটি পরিবারকে কেন এক বছরের বেশি সময় ধরে অন্যের অতিথি হয়ে বা অন্যত্র বসবাস করতে হবে? পুলিশ তো এ ভাবে বাড়ি আটকে রাখতে পারে না। বাড়িটি যদি মামলার অংশ হয়, তবে তারা ছবি তুলে নিয়ে তালা খুলে দিতে পারত। এর অর্থ কী!” দু’দিনের মধ্যে আবেদনকারী খালিদা বিবির হাতে বাড়ির আবাসন অংশের চাবি তুলে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি খন্না, যাতে তাঁরা সেখানে সপরিবার বসবাস করতে পারেন।
গত বছর সেপ্টেম্বরে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত খালিদাকে নিজের বাড়িতে প্রবেশ ও বসবাসের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করায় দায়রা আদালত স্থগিতাদেশ দেয়। নিজেদের বাড়িতে আর ঢুকতে পারেনি মৌলানা সাদের পরিবার। বিচারপতি খন্না প্রশ্ন করেন, “কেন চাবি আটকে রাখতে হবে? ওই বাড়ি থেকে তো কিছু বাজেয়াপ্ত করার প্রশ্ন নেই। কয়েক জন কেন সেখানে এসে উঠেছিলেন, এই হচ্ছে মামলার বিষয়।” তাঁদের বসবাসের এলাকা ছাড়া মরকজের অন্য অংশ ব্যবহার না করার নির্দেশ আবেদনকারী খালিদা বিবিকে দেন বিচারপতি।