ফাইল চিত্র।
একটি বলিউডি ছবির গান। এক জনের বাবা হতে চলার উত্তেজনা। কারও বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করার স্বপ্ন। মঙ্গলবার জঙ্গিদের গুলিতে খানখান হয়ে গেল সব কিছু।
জম্মু-কাশ্মীরের শোপিয়ানে জইশ ই মহম্মদ জঙ্গিদের গুলিতে নিহত চার পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল মজিদ গানালে, আনিস উল ইসলাম মির, মেহরাজউদ্দিন দার এবং হামিদউল্লাহ গনির পরিবার বুধবার সারা দিন ধরে হাতড়ে বেড়াল সেই বলিউডি গান। সেই স্বপ্ন। সেই উত্তেজনা।
গান্দেরবালের বাসিন্দা মজিদ ১৯৯৫ সালে হিজবুল মুজাহিদিনে নাম লিখিয়েছিলেন। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসেন তিনি। যোগ দেন পুলিশে। মজিদের বড় প্রিয় ছিল ‘ইয়ারানা’ ছবিটির ‘তেরা য্যায়সা ইয়ায় কাঁহা’ গানটি। তাঁর ১৮ মাসের মেয়ে উজ়মা বাবাকে দেখতে না পেয়ে কেঁদেই চলেছে। বাবার ভিডিয়ো ক্লিপ দেখেই একটু শান্ত হচ্ছে ছোট্ট মেয়েটা। সেই ভিডিয়োতে ‘তেরা য্যায়সা...’ গানটি গাইছেন মজিদ। তাঁর পরিবারের লোকেরা জানাচ্ছেন, কয়েক বছর আগে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে গানটি গেয়েছিলেন মজিদ। তাঁর ভাই, পেশায় শ্রমিক শওকত কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘১৫ দিন আগেই মজিদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমি অল্পতেই মেজাজ হারাই। আমাকে মাথা ঠান্ডা রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।’’
জঙ্গিদের গুলিতে নিহত কুলগাম জেলার গ্রামের বাসিন্দা আনিসের বাড়িতে এখন শোকার্ত পরিজনের ভিড়। আনিসের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। স্বামীর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই শোকে ভেঙে পড়েছেন তিনি। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। বাড়িতে সব সময় হাজির এক জন চিকিৎসক। আনিসের কাকা সবজ়ার বাট বলেন, ‘‘মাত্র সাত মাস আগে বিয়ে হয়েছিল দু’জনের। সন্তানের পৃথিবীতে আসার অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন তাঁরা। মাত্র ছাব্বিশেই আনিস চলে গেল।’’
আগামী বছরেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল মেহরাজউদ্দিনের। বাড়িতে তার প্রস্তুতি চলছিল। বান্দিপোরার খেওয়া গ্রামে নিজের বাড়িও বানাতে শুরু করেছিলেন তিনি। আর এক নিহত কনস্টেবল হামিদউল্লাহ গনি থাকতেন ভাই আব্দুল মজিদ গনির সঙ্গে। তাঁর পরিবার থাকে অনন্তনাগে। সেখানে এখন শোকের ছায়া।