কমলেও রোখা যাচ্ছে না জাল নোট।
২০১৬ সালে নোট বাতিলের সময়ে নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, নতুন নোট বাজারে এলে কমে যাবে জাল নোটের সমস্যা। নতুন নোটগুলি এত উন্নত মানের হবে যে তা নকল করা সম্ভব হবে না। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের তিন বছর বাদে কেন্দ্রীয় রিপোর্ট বলছে, আগের চেয়ে কমলেও একেবারে থামানো যায়নি জাল নোটের চক্রকে। গোটা ভারতে কম-বেশি সক্রিয় রয়েছে সেই চক্রের সদস্যেরা। চলতি বছরের প্রথম ছ’মাসে জাল নোট উদ্ধারের প্রশ্নে প্রথম দু’টি স্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্র ও গুজরাত। পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ২০১৮ সালে গোটা দেশে ১৭.৭৫ কোটি টাকা মূল্যের জাল নোট উদ্ধার হয়েছিল। সেখানে ২০১৯ সালের প্রথম ছ’মাসে গোটা দেশে উদ্ধার হয়েছে ৫.০৫ কোটি টাকার জাল নোট। তবে এই পরিসংখ্যানেই আশার আলো দেখছেন স্বরাষ্ট্র কর্তারা। তাঁদের ব্যাখ্যা, চলতি বছর ও গত বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে ২০১৮ সালে দিল্লি ও অন্ধ্রপ্রদেশে যথাক্রমে ৩.৬৩ কোটি এবং ১.১১ কোটি মূল্যের জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। সেখানে এ বছরে ওই দুই রাজ্যে উদ্ধার হয়েছে ১২ লক্ষ ও ৯ লক্ষ মূল্যের জাল নোট। চলতি বছরে জাল নোট উদ্ধারের প্রশ্নে প্রথম তিনটি স্থানে থাকা রাজ্যগুলি সীমান্তবর্তী রাজ্য। এক স্বরাষ্ট্র কর্তার কথায়, ‘‘সীমান্ত রাজ্যগুলিতে জাল নোট প্রবেশ করলেও সেখান থেকে গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা আটকাতে অনেকাংশে সাফল্য পাওয়া গিয়েছে।’’
কিন্তু মন্ত্রকের কাছে দুশ্চিন্তার বিষয় হল জাল টাকার উন্নত মান। নোট ছাপার মেশিনে উন্নত মানের কাগজ ব্যবহার করে নতুন দু’হাজার ও পাঁচশো টাকার হুবহু নকল করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে কারবারিরা। জাল নোটগুলি এত উন্নত যে খালি চোখে তা ধরা প্রায় মুশকিল। নোটে যে সুরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে তার প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ নকল করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে জাল কারবারিরা।
জাল নোট আটক
• ২০১৮: ১৭.৭৫ কোটি।
পশ্চিমবঙ্গ- ২,০৮,৮৭,৬০০টাকা
• ২০১৯ (জুন পর্যন্ত): ৫.০৫ কোটি।
পশ্চিমবঙ্গ-৮২,৪৩,৭০০টাকা
গত ছ’মাসে জাল দু’হাজার ও পাঁচশোর নোট উদ্ধার হয়েছে যথাক্রমে ২০,০৬৮ ও ১৩,৫১৩টি। ২০১৮ সালে সেই সংখ্যাটি ছিল, ৫৪,৬৭৪ ও ২৫,৮৭৪। মন্ত্রকের মতে, সীমান্তে নজরদারি ও ধরপাকড় বেড়ে যাওয়ায় এমনিতেই পাচারকারির সংখ্যা কমেছে। উপরন্তু ছোট নোটে কমিশন কম থাকায় পাচারকারিরা ঝুঁকি নিতে চাইছে না। পাচারকারিদের বেশি কমিশনের লোভ দেখাতে এখন বড় নোট বেশি সংখ্যায় জাল করে তা ভারতে ঢোকানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে। অতীতে পাকিস্তানের মুজফ্ফরাবাদ, করাচির মতো বিভিন্ন স্থান থেকে নেপাল-বাংলাদেশের পথে ভারতে প্রবেশ করত জাল নোট। কিন্তু তাতে খরচ বেশি হওয়ায় জাল নোটের কারবারিরা এখন বাংলাদেশের একাধিক জেলায় ছাপাখানা খুলেছে বলে মত ভারতীয় গোয়েন্দাদের। সূ্ত্রের মতে, ঢাকা, বরিশালের মতো শহরে ছাপাখানা বসিয়ে সেই নোট মালদহ-মুর্শিদাবাদ সংলগ্ন বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে ভারতে ঢোকাতে সক্রিয় রয়েছে কারবারিরা।
জাল নোটের পাশাপাশি সরকারকে চিন্তায় রেখেছে বেআইনি লেনদেনও। নোট বাতিল হলে বেআইনি লেনদেন কমবে বলে সে সময়ে সরকার ওই দাবি করলেও বাস্তবে হয়েছে উল্টো। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীনে থাকা ফিনানশিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ) বেআইনি লেনদেন ও সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহৃত অর্থের খোঁজ রাখে। সেই সংস্থা চলতি বছরের এপ্রিলে জানিয়েছে ২০১৭-১৮ সালে গোটা দেশে প্রায় ১৪ লক্ষ সন্দেহজনক লেনদেনের খবর এসেছে। যা তার আগের বছরের চেয়ে অনেকটাই বেশি।
ফলে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কতটা সময়োপযোগী ও যুক্তিযুক্ত ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে খোদ সরকারেরই রিপোর্ট।