ফৈজ় আহমেদ ফৈজ় ফাইল চিত্র
সিবিএসই পাঠ্যক্রম থেকে বাদ পড়ল উর্দু কবি ফৈজ় আহমেদ ফৈজ়ের দু’টি কবিতা। চলতি, অর্থাৎ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই পরিবর্তন।
দশম শ্রেণিতে সমাজবিজ্ঞানের পাঠ্যবইয়ের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা, সাম্প্রদায়িকতা এবং রাজনীতি’ এই অধ্যায়ে ফৈজ়ের কবিতা দু’টির উদ্ধৃতি দিয়ে রাজনৈতিক পোস্টার বিষয়ে পড়ানো হত দশম শ্রেণিতে। বাদ দেওয়া হয়েছে সেগুলি। তা ছাড়া, বাদ দেওয়া হয়েছে একটি রাজনৈতিক কার্টুন। এ বছর যে নতুন বই ছাপা হয়েছে, তাতে এই পোস্টার দু’টি বা কার্টুন নেই। সিবিএসই-র পক্ষ থেকে নোটিস জারি করে জানানো হয়েছে, যাঁরা বইয়ের পুরনো সংস্করণ পড়বেন, তাঁরা যেন খেয়াল করেন যে, ৪৬, ৪৮ ও ৪৯ নম্বর পাতা পাঠ্যক্রমে থাকছে না। শুধু তা-ই নয়, বাদ পড়েছে ‘ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড ডাইভার্সিটি’ নামের অধ্যায়টিও। বিভিন্ন দেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে সামাজিক বৈষম্য সম্বন্ধে পড়ুয়াদের সচেতন করার জন্য এই অধ্যায়টি রাখা হয়েছিল পাঠ্যক্রমে।
কেন এই পদক্ষেপ, সে বিষয়ে সিবিএসই বোর্ডের তরফে বিবৃতি দিয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে বোর্ডের এক কর্তা জানিয়েছেন, ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি)-এর নির্দেশিকা মেনেই পাঠ্যক্রমে এই পরিবর্তন করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রাক্তন অধ্যাপক হরি বাসুদেবন এই পাঠ্যক্রম তৈরি করেছিলেন। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে সিবিএসই-র দশম শ্রেণির বইয়ে ফৈজ়ের কবিতা দু’টির কিছুটা অংশ ইংরেজি অনুবাদে পড়ানো হয়ে এসেছে। লাহোর জেলে বন্দি থাকার সময়ে কবিতা দু’টি লিখেছিলেন ফৈজ়। কথিত, বন্দিদশায় তাঁকে একবার চিকিৎসকের কাছে শিকলে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারপরেই ফৈজ় লিখেছিলেন— ‘‘আজ, প্রকাশ্যে স্বাধীন চলাটুকুও শিকলবন্দি।”
শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রমে বদল নয়, বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে একাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রমেও। যেমন, ইতিহাসের পাঠ্যক্রম থেকে বাদ পড়েছে ‘সেন্ট্রাল ইসলামিক ল্যান্ডস’ অধ্যায়টি। আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে কী ভাবে ইসলামি শাসন কায়েম হয়েছিল, তার কথাই বলা হয়েছিল এই অধ্যায়ে। তা ছাড়া, বাদ পড়েছে বেশ কিছু আর্থসামাজিক প্রসঙ্গও। কিছু স্কুল থেকে আবার দাবি করা হয়েছে, অঙ্ক বই থেকেও বেশ কিছু জরুরি অধ্যায় বাদ দেওয়া হয়েছে। সিলেবাস মেদবর্জিত করতেই এই পদক্ষেপ কি না, তা স্পষ্ট নয়। দশম ও একাদশ শ্রেণি ছাড়া দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সিলেবাস থেকেও একটি অধ্যায় বাদ গিয়েছে— ‘কোল্ড ওয়ার এরা অ্যান্ড নন-অ্যালাইন্ড মুভমেন্ট’। এই অধ্যায়ে মূলত দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরুর শাসনকাল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।
শিক্ষাবিদদের একাংশের দাবি, এই পরিবর্তনের কারণ শিক্ষায় গৈরিকীকরণের চেষ্টা। ভারত তথা উপমহাদেশের ইতিহাস ‘নতুন করে’ লেখার উদ্দেশ্যে এই সব পরিবর্তন আনছে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা এনসিইআরটি। এবং তাদের সুপারিশ মেনে পাঠ্যক্রমে বদল আনছে সিবিএসই। বোর্ডের শীর্ষকর্তারা এ বিষয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও কিছু শিক্ষাবিদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী সরকার এক দিকে যেমন বিশ্ব ইতিহাসে ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতির অবদান সম্বন্ধে জানতে দিতে চায় না নতুন প্রজন্মকে, তেমনই কমিউনিজ়ম তথা সামাজিক বিপ্লবের ধারণাকেও পাঠ্যক্রমের আড়ালে নিয়ে যেতে চায়। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সহিষ্ণুতার পাঠ পাঠ্যক্রম থেকে সরিয়ে দেওয়ায় শিক্ষাব্যবস্থার গৈরিকীকরণের প্রচেষ্টাই প্রকট হয়ে উঠছে, মত শিক্ষা মহলের একাংশের।