প্রতীকী ছবি।
ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যার তোড়জোড় ভেস্তে গেল ফেসবুকের উদ্যোগেই! আর সেই টানটান ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন ফেসবুকের আয়ারল্যান্ডের সদর দফতরের এক আধিকারিক, দিল্লি ও মুম্বইয়ের ডিসিপি এবং মুম্বইয়ের এক পুলিশ ইনস্পেক্টর ও তাঁর স্ত্রী।
শনিবার সন্ধ্যায় এক ব্যক্তি ফেসবুক লাইভে জানান, তিনি আত্মহত্যা করতে চান। ওই ভিডিয়ো দেখেই সন্ধ্যা ৭টা ৫১ মিনিটে ডিসিপি অন্বেষ রায়ের (সাইবার সেল, দিল্লি) কাছে আয়ারল্যান্ডের নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে ফেসবুকের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে জানান, দিল্লির এক বাসিন্দা আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর আইপি অ্যাড্রেস, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, সংশ্লিষ্ট ভিডিয়োটি, যা ফেসবুক পোস্ট করা হয় এবং অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত ফোন নম্বর ডিসিপি-কে দেওয়া হয়। ফোন নম্বর ট্র্যাক করে দেখা যায়, সেটি পূর্ব দিল্লির মান্ডওয়ালি অঞ্চলের। এর পরেই ওই অঞ্চলের ডিসিপি জসমীত সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানান অন্বেষ। জসমীত জানিয়েছেন, মধু বিহার থানার এসএইচও সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে দেখেন, সেখানে রয়েছেন এক মহিলা। তিনি জানান, ফেসবুকের ওই অ্যাকাউন্টটি তাঁর নামে খোলা হলেও ব্যবহার করেন তাঁর স্বামী। দু’সপ্তাহ আগে তাঁর সঙ্গে ঝগড়ার পরে মুম্বইয়ে গিয়েছেন তাঁর স্বামী। সেখানে কোথায় তিনি রয়েছেন, জানেন না ওই মহিলা।
রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ মুম্বইয়ের ডিসিপি (সাইবার) রশ্মি কারান্ডিকরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন অন্বেষ। রশ্মি জানান, স্ত্রীর দেওয়া নম্বরে ফোন করলেও ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। ফোন নম্বর ট্র্যাক করে ওই অঞ্চলটিকে চিহ্নিত করা হয়। সেখানকার পুলিশ ইনস্পেক্টর প্রমোদ খোপিকর জানান, বহু চেষ্টাতেও ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত তাঁর কথামতো ওই ব্যক্তির স্ত্রী স্বামীর উদ্দেশে আবেগপূর্ণ বার্তা এবং তাঁদের নিজেদের ও সন্তানের ছবি পাঠান। কিছু ক্ষণ পরে ‘ব্লু টিক’ দেখে স্ত্রী বুঝতে পারেন বার্তা পৌঁছেছে স্বামীর কাছে।
এর পরেই রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ওই ইনস্পেক্টরকে কনফারেন্স কলে যুক্ত করে স্বামীকে ফোন করেন স্ত্রী। ঘণ্টাখানেক স্বামী-স্ত্রীর কথা হয়। ইতিমধ্যেই ওই ব্যক্তির ঠিকানা চিহ্নিত করে সেখানে যান সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার।
ইনস্পেক্টর প্রমোদ জানিয়েছেন, ফোনে ওই ব্যক্তি জানান, করোনা আবহে আয় কমে গিয়েছিল। সঙ্গে সংক্রমণের ভয়েও বিপর্যস্ত ছিলেন তিনি। এর পরেই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ওই ব্যক্তির পাশে দাঁড়ান তাঁর স্ত্রী এবং দিল্লি ও মুম্বই পুলিশ।
প্রমোদ জানান, তাঁর স্ত্রীও ওই ব্যক্তির আত্মহত্যা রুখতে নিজেদের দাম্পত্য জীবনের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলেন ওই ব্যক্তির সঙ্গে। এমনকি মিথ্যাই নিজেদের করোনা জয়ী বলে সংক্রমণ নিয়ে ভীতি কাটানোর পরামর্শও দেন। মুম্বই পুলিশ তাঁকে সবরকম ভাবে সাহায্য করবে বলেও আশ্বস্ত করেন প্রমোদ। সঙ্গে ওই ব্যক্তির স্ত্রীকেও মুম্বইয়ে আসতে বলেন তিনি। ভোর ৩টের নাগাদ ওই ব্যক্তির ঠিকানায় পৌঁছয় মুম্বইয়ের ভায়ান্ডার থানার অফিসার। ইতিমধ্যে ওই ব্যক্তি নিজেকে অনেকটাই সামলে নিয়েছিলেন। পরদিন, রবিবার সকাল ১০টায় ফের ওই ব্যক্তিকে ফোন করেন তিনি। সেই সময়ে প্রমোদ-সহ সমস্ত অফিসারকে ধন্যবাদ জানান ওই ব্যক্তি।