ছবি রয়টার্স।
যেমনটা ভাবা গিয়েছিল, তেমনই। বুধবার তীব্র বাদানুবাদে উত্তপ্ত হল ফেসবুকের জবাবদিহি তলবের জন্য ডাকা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক।
তার পরে তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত এই স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান শশী তারুরের টুইট, “এ দিনের মতো আলোচনা স্থগিত হয়েছে একটু আগে। আলোচনা হয়েছে সাড়ে তিন ঘণ্টা। সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে এ বিষয়ে আলোচনা জারি রাখার।” তখন ফেসবুকের ভারতীয় কর্তাদের ফের ডাকা হতে পারে বলেও টুইটে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর অনুযায়ী, এ দিন গোড়া থেকেই আলোচনার মেজাজ ছিল চড়া সুরে বাঁধা। ডাকা হয়েছিল এই মার্কিন সোশ্যাল মিডিয়া বহুজাতিকের ভারতীয় কর্তা অজিত মোহনকে। সঙ্গে ছিলেন আইনি উপদেষ্টা সাঁঝ পুরোহিত। গত কাল তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জ়াকারবার্গকে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তা সামনে রেখে শাসক দলের সাংসদদের প্রশ্ন, কংগ্রেসের প্রতি তাদের পক্ষপাত রয়েছে কি না। উল্লেখ্য, চিঠিতে প্রসাদের দাবি ছিল, যেখানে ফেসবুকের উচিত মত আদান-প্রদানের খোলা উঠোন হওয়া, সেখানে দক্ষিণপন্থীদের লেখা চেপে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে তাদের। লেখা-ছবি-ভিডিয়োর সত্যতা যাচাইয়ের পদ্ধতিও শিথিল। তার উপরে সংস্থার শীর্ষ ভারতীয় কর্তারা যে রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী, তারা গোহারা হেরেছে গত কয়েকটি ভোটে!
উল্টো দিকে, বিরোধী শিবিরের সাংসদরা আবার নিশানা করেন সংস্থাটির কয়েক জন শীর্ষ কর্তার সঙ্গে বিজেপি ও সঙ্ঘের ঘনিষ্ঠতাকে। সম্প্রতি একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ভারতে অনলাইন কেনাকাটার বাজারে টাকা মেটানোর মাধ্যম হয়ে উঠতে চায় ফেসবুকের শাখা হোয়াটসঅ্যাপ। তার জন্য মোদী সরকারের অনুমোদন পেতে শাসক দলের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়ার পথে হাঁটছে তারা। সূত্রের খবর, এ নিয়ে বিস্তর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে ফেসবুকের শীর্ষ ভারতীয় কর্তাকে।
আরও পড়ুন: ১১ বছর পরে ফের কলকাতা থেকে লন্ডনের সরাসরি উড়ান
দু’পক্ষই বিপক্ষ শিবিরের প্রতি ফেসবুকের পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছে ঠিকই, কিন্তু সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে, উভয় দিক থেকেই চোখা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগে বিদ্ধ সংস্থাটিকে। সাংসদরা জানতে চেয়েছেন, তাদের নিয়োগের (বিশেষত উঁচু পদে) পদ্ধতি কী? বিজ্ঞাপনী নীতি কী ভাবে স্থির করে তারা? কোনও লেখা, ছবি বা ভিডিয়োর নিরপেক্ষতা কী ভাবে যাচাই করা হয়?
ব্যবসা করার সময়ে দেশের সরকার, শাসক দল, এমনকি যে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমদূরত্ব কী ভাবে বজায় রাখে তারা? সূত্রের খবর, ফেসবুকের তরফে দাবি করা হয়, রাজনৈতিক ভাবে নিরপেক্ষ থাকাই তাদের নীতি। এ দিন মোট সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠকের মধ্যে অজিতকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে ঘণ্টা দুয়েক। তার পরেও এমন আরও ৯০টি প্রশ্নের বিশদ উত্তর দিতে বলা হয়েছে ফেসবুকের ভারতীয় শাখাকে।
আরও পড়ুন: পিএম কেয়ার্সের তথ্যে নাম নেই দাতাদেরই
এ দিনই জ়াকারবার্গকে চিঠি দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। লিখেছেন, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ফেসবুকের ভূমিকা নিয়ে অনেক আগেই দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছিল তাঁর দল। গত বছর জুনে সংসদে পর্যন্ত এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। আশা ছিল, সংসদে ওই প্রশ্ন তোলায় সমস্ত রাজনৈতিক দল ও সংবাদমাধ্যম সজাগ হবে এই বিষয়ে।
কিন্তু সম্প্রতি ওই সংস্থার বিষয়ে প্রকাশিত একের পর এক খবর দেখিয়ে দিয়েছে যে, ওই আশঙ্কা অমূলক ছিল না। কয়েক মাসের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। তার আগে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্টে নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমবঙ্গ নিয়েও ফেসবুক-বিজেপি আঁতাঁতের ইঙ্গিত দেয় বলে ডেরেকের অভিযোগ। শাসক দলের সঙ্গে ফেসবুকের এমন ‘আঁতাঁত’, চিন্তার বিষয় বলে তারুরের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন কোয়ম্বত্তূরের সিপিএম সাংসদ পি আর নটরাজনও।