২৬/১১ সন্ত্রাসের নিশানা তাজমহল হোটেল। ফাইল চিত্র।
শুক্রবার ভোরে তাঁর টুইট— ‘ভুলছি না কখনও’। ১২ তম বর্ষপূর্তিতে মুম্বই হামলাকে এ ভাবেই স্মরণ করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বুঝিয়ে দিলেন, ২৬/১১ সন্ত্রাসের স্মৃতি এখনও দগদগে অনেক ভারতবাসীর মনেই।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বরের রাত থেকে টানা চার দিন দেশের বাণিজ্য রাজধানীতে সেই রক্তস্রোত বদলে দিয়েছিল নিরাপত্তার সামগ্রিক ধারণাই। উপকূল নজরদারিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আরব সাগর পেরিয়ে দক্ষিণ মুম্বইয়ে ঢুকে পড়েছিল ১০ সশস্ত্র পাকিস্তানি জঙ্গি। দ্রুত তারা ছড়িয়ে পড়েছিল মুম্বইয়ের লিওপোল্ড কাফে, নরিম্যান হাইস, তাজ হোটেল, ছত্রপতি শিবাজী বাস টার্মিনাস, ট্রাইডেন্ট হোটেল, কামা হাসপাতাল-সহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। বইতে শুরু করেছিল রক্তস্রোত।
তাদের হামলার বলি হয়েছিলেন মোট ২৮ জন বিদেশ নাগরিক-সহ ১৬৪ জন। আহত হয়েও বরাতজোরে প্রাণে বেঁচে যান ৩০৮ জন। তাঁদেরই এক জন শ্যামসুন্দর চৌধুরী।
মুম্বইয়ের ভিলে পার্লে বস্তির বাসিন্দা শ্যাম সে দিন পাক জঙ্গিদের বুলেটে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। প্রাণে বেঁচে গেলেও চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়েছেন তিনি। ১৩ বছর ধরে শয্যাশায়ী শ্যামের স্ত্রী বেবি বলেন, ‘‘আমার স্বামী ট্যাক্সিচালক ছিলেন। সে দিন ডিউটিতে যাচ্ছিলেন। রাস্তা পার হওয়ার সময় সিগন্যাল ভেঙে ধেয়ে আসা একটি গাড়ি থেকে তাঁকে গুলি করা হয়। মাথায় এবং কাঁধে গুলি লাগে। শুধু চলচ্ছক্তিহীন হয়ে পড়া নয়, তাঁর স্মৃতিশক্তিও অনেকটাই লোপ পেয়েছে। এখন কেবল দেখতে এবং শুনতে পান।’’
সরকারের থেকে দেড় লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ছাড়া আর কিছুই পায়নি শ্যামের পরিবার। সংসাস চালাতে তাই বেসরকারি সংস্থায় নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি নিতে হয়েছে বেবিকে। তবে রতন টাটার প্রতিষ্ঠান ‘টাটা ট্রাস্ট’ তাঁদের দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনার ভার নিয়েছে।
শুধু শ্যামের পরিবার নয়, ২৬/১১ সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবারের দিকেই এ ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রতনের প্রতিষ্ঠান। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার নিশানা ছিল টাটা গোষ্ঠীর তাজমহল প্যালেস হোটেলও। জঙ্গিদের বোমা এবং গুলিতে সেখানে নিহত হয়েছিলেন ওই হোটেলের কর্মী এবং অতিথি-সহ ৩১ জন। আহত হয়েছিলেন বহু। মুম্বই সন্ত্রাসে নিহতদের স্মৃতিতে প্রতি ২৬ নভেম্বরই শোকবার্তা পাঠান টাটা কর্ণধার। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
তবে বেবির মতো মুম্বই সন্ত্রাসের ভুক্তভোগীদের অনেকের মনেই এখনও একটা প্রশ্ন খোঁচা দেয়— আজমল কাসভের না হয় ফাঁসি হয়েছে। কিন্তু পড়শি দেশে ঘাঁটি গেড়ে থাকা আসল অপরাধীরা শাস্তি পেল কি?