India

সেনা পিছোনোর সিদ্ধান্তে লাভ কী, প্রশ্ন তুললেন বিশেষজ্ঞেরা

সামরিক বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, আদৌ কি ভারতের চাপে চিনের সেনা পিছু হটল? নাকি গালওয়ান নদীতে বরফ গলা জল বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২০ ০৪:৩৩
Share:

উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়া গালওয়াল উপত্যকা। সৌজন্য: ম্যাক্সার।

‘চিন সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি, ভারতের সেনাবাহিনী কেন ভারতের এলাকাতেই পিছু হটছে? আমরা কেন পিছু হটছি?’

Advertisement

প্রশ্নকর্তা নরেন্দ্র মোদী

না, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নন। ২০১৩-র ১৩ মে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রশ্ন ছুড়ে টুইট করেছিলেন। সে বছর ডেপসাং উপত্যকায় চিনের সেনা ভারতের এলাকায় ঢুকে তাঁবু খাটিয়ে বসেছিল। তার পরে দু’দেশের সেনাই পিছু হটে।

Advertisement

এ বার মোদী জমানায় গালওয়ান উপত্যকায় সংঘাত এড়াতে ভারত ও চিন, দু’দেশের সেনাই পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চিন ভারতের ধারণা অনুযায়ী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলএসি পেরিয়ে ভারতের এলাকায় ঢুকে এসেছিল বলে অভিযোগ। চিন সেখান থেকে কিছুটা পিছু হটেছে। কিন্তু ভারতের সেনা পিছিয়ে আসছে কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস মোদীর পুরনো প্রশ্নই খুঁজে বার করেছে। কংগ্রেস নেতা শশী তারুরের কটাক্ষ, ‘‘আমি এ বিষয়ে মোদীজির পাশে। প্রধানমন্ত্রীর উচিত তাঁর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।’’ কংগ্রেসের আর এক নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কি নিজের কথা মনে রয়েছে? এখন বলবেন কি, আমাদের সেনা আমাদের জমিতেই কেন পিছু হটছে?’’

সাত বছর আগে নরেন্দ্র মোদীর করা সেই টুইট।

গালওয়ান উপত্যকার পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-র সংঘর্ষস্থল, হট স্প্রিং ও গোগরা এই তিনটি এলাকা থেকেই চিনের সেনা দেড় থেকে দু’কিলোমিটার পিছু হটেছে। সামরিক বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, আদৌ কি ভারতের চাপে চিনের সেনা পিছু হটল? নাকি গালওয়ান নদীতে বরফ গলা জল বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত? দু’দেশের সমাধান সূত্র অনুযায়ী, যতটা চিন সেনা পিছিয়েছে ততটাই পিছিয়ে যাবে ভারত। দু’দেশের মাঝের ওই তিন থেকে চার কিলোমিটার ‘বাফার জ়োন’ বলে গণ্য হবে। সেখানে কোনও পক্ষই আপাতত যাবে না। গালওয়ানে এই ‘বাফার জ়োন’ পড়ছে এলএসি-র ভারতের দিকে। এর অর্থ, আগামী এক মাস ভারতের সেনা পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-তেও যাবে না।

সামরিক বিশেষজ্ঞ ব্রহ্ম চেলানির মতে, এই ‘বাফার জ়োন’-এ রাজি হয়ে ভারতের পেট্রোলিং বা টহলদারি গালওয়ান ও শাইয়োক নদীর সংযোগস্থলের পূর্ব দিকেই আটকে থাকবে। গালওয়ানে ভারত আপাতত ঢুকবে না। ফলে চিন গোটা গালওয়ানকেই নিজের বলে যে দাবি জানাচ্ছে, তাতেই সিলমোহর পড়ছে। তাঁর মতে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাড়াহুড়ো করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে গিয়ে সামরিক ঝুঁকি তৈরি হল। সেনাবাহিনীর সূত্রের অবশ্য পাল্টা যুক্তি, এই ‘বাফার জ়োন’-এর ব্যবস্থা অস্থায়ী। চিন পুরোপুরি পিছু হটেছে তা নিশ্চিত করার পরে ফের আগের মতো টহলদারি শুরু হবে। দু’দেশের সেনা সরেছে কি না, তা নিশ্চিত করতে ড্রোন ও সাটেল্যাইট ছবি ব্যবহারে রাজি হয়েছে দু’শিবির। একই সঙ্গে আগামী দিনে উত্তপ্ত লাদাখে কী ভাবে দু’পক্ষের সেনা টহল চলবে, তা আগামী সেনা কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে স্থির হওয়ার কথা।

আরও পড়ুন: মেলেনি ছাড়, পিছোচ্ছে টিকা প্রয়োগের দিন

আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণে এ বার চিনকে টেক্কা মুম্বইয়ের

কাল চিনের সরকারি টিভি চ্যানেল সিসিটিভি-৪-এর একটি অনুষ্ঠানে কিছু স্যাটেলাইট ছবি দেখানো হয়। চ্যানেলের দাবি, ১৪ নম্বর পেট্রোলিং পয়েন্টের কাছে ভারতীয় সেনার একটি হেলিপ্যাড এবং অন্যান্য সামগ্রী সরিয়ে দিচ্ছে চিনের বাহিনী। ভারতীয় সেনার তাঁবু এবং হেলিপ্যাডের ছবি দেখানো হলেও সেখানে চিনা সেনার কার্যকলাপের ছবি নেই। চিন দাবি করেছিল, তারা ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেনি। চিনের সরকারি চ্যানেলের দাবিমতো চিনা বাহিনী যদি ভারতীয় তাঁবু ও হেলিপ্যাড তুলে দিয়ে থাকে, তা হলে এটা স্পষ্ট হয় যে, বেজিং আগ্রাসন চালিয়েছে ও ভারতীয় ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করেছে।

গালওয়ানে পিছু হটলেও প্যাংগং লেকের উত্তরে চিনের সেনা ফিঙ্গার চার থেকে ফিঙ্গার আট পর্যন্ত দখল করে ঘাঁটি বানিয়ে বসে রয়েছে। ভারতের দাবি গোটাটাই ভারতের এলাকা। কিছু দিন আগে পর্যন্ত ফিঙ্গার আটে টহল দিয়ে এসেছে ভারতীয় সেনা। সেনা সূত্রের খবর, ওই এলাকায় চিনের সেনা, তাঁবু ছাড়াও প্রায় শ’খানেক সাঁজোয়া গাড়ি এখনও উপস্থিত। এ ছাড়া দৌলত বেগ ওল্ডি সড়ক ও সেই সড়কের উপরে থাকা বিমান ঘাঁটি নজরে রাখতে ডেপসাংয়ে চিন সেনা যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে বসে ছিল, এখনও তারা সেখানেই রয়েছে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আজ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ চিন ও পাকিস্তান সীমানায় সড়ক নির্মাণের পরিস্থিতি নিয়ে বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন (বিআরও)-এর সঙ্গে বৈঠক করেন। বিআরও-র ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরপাল সিংহ সীমান্ত এলাকায় সড়ক পরিকাঠামো তৈরির হালহকিকত তুলে ধরেন। সীমান্তে ভারতের সড়ক পরিকাঠামো তৈরি নিয়েই চিনের সঙ্গে সংঘাতের শুরু। আজকের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ২০ হাজার কোটি টাকার সীমান্ত
সড়ক তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে শেষ করা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement