পুরু বরফে ঢেকে রয়েছে গাড়ি। রবিবার ছাঙ্গু এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
শনিবার সকাল থেকেই মনটা খারাপ হয়ে পড়ল। এসেছিলাম নাথু লা যাব বলে। কিন্তু সেখানে তো যাওয়াই হল না। ছাঙ্গুর অনেক কাছে গিয়েও ছাঙ্গুটাও দেখা হল না। দুর্বিপাক অপেক্ষা করে আছে, ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি! রাতে সেনা শিবিরে পৌঁছে যেন হাতে প্রাণ ফিরে পেলাম।
শনিবার গ্যাংটক থেকে বেলা ১১টাতেই ছাঙ্গুর কাছাকাছি পৌঁছে যাই। তখন বরফ পড়া শুরু হয়ে গিয়েছে। দারুণ লাগছিল চারদিকটা। কারণ, বরফের জন্যই তো এসেছিলাম। কিন্তু আমাদের গাড়িচালক বললেন, ‘‘আবহাওয়া খারাপ। ১০ মিনিটে নেমে যাব।’’ আমরা ওঁর কথায় কান দিইনি। আরও কিছুক্ষণ থাকলাম। গাড়িতে ফিরতেই চালক বললেন, ‘‘লাইন পড়ে গিয়েছে, সারারাত রাস্তাতেই থাকতে হতে পারে।’’ আমরা ভাবলাম, এ রকম হয় নাকি! কোনও রকমে তাও দু’তিন কিলোমিটার নীচে আসতে পেরেছিলাম। কিন্তু বরফে পরপর গাড়ির চাকা পিছলে ধাক্কা খাচ্ছে। কোনওটা খাদের দিকে চলে যাচ্ছে। তার পর বিকেল পর্যন্ত ঠায় অপেক্ষা করলাম। ঠান্ডাটাও বাড়ছিল। তুষারপাত থামছিল না। স্বপ্নেও ভাবিনি এ রকম পরিস্থিতি দাঁড়াবে। শেষে ঠিক করলাম, নীচে যে দোকানটা থেকে জুতো, জামাকাপড় ভাড়া নিয়েছিলাম, ওই পর্যন্ত হেঁটেই যাব। মেয়ের হাত ধরলাম। সঙ্গে বন্ধু সুভাষ, ওর পরিবার। আমার স্ত্রী তো পিছল বরফে আছাড় খেল একবার। সকালে নীচে খাবারের অর্ডার দিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু খাওয়া আর হল কই! আলো পড়ে গিয়েছিল। অন্ধকার সঙ্গে করে খিদে, তৃষ্ণা নিয়ে প্রবল ঠান্ডায় বাঁচার চেষ্টা করে চলেছি দু’টি পরিবার। ১৭ মাইলের একটু কাছে গিয়ে একটা দোকানে আশ্রয় পেলাম। সেখানে অল্প খাবার খেয়ে সেনার শিবিরের দিকে ফের ঝুঁকির হাঁটা। কিন্তু মাঝপথে গাড়ি এসে তুলে নিয়ে গেল শিবিরে। সেনা বাড়ির অতিথির মতো সব ব্যবস্থা করল। বিপদে সেনার এমন ভূমিকা সত্যিই শ্রদ্ধা জাগায়।
বেসরকারি সংস্থার কর্মী