তখনও চলছে উদ্ধারকাজ। —ফাইল চিত্র।
প্রতিকূলতা সত্ত্বেও হাল ছাড়েননি উদ্ধারকারীরা। তবে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা-বারকোট সুড়ঙ্গ থেকে আটকে পড়া শ্রমিকদের বার করে আনতে যে সময় লাগবে বলে মনে করা হয়েছিল, তার অনেক কম সময়েই উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। এমনটাই জানাচ্ছেন ‘ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’ (জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বাহিনী বা এনডিএমএ)-র কর্তা সৈয়দ আতা হাসনাইন। তবে এর কৃতিত্ব তিনি দিচ্ছেন ‘র্যাট-হোল মাইনিং’ বা ‘ইঁদুরের গর্ত’ খোঁড়ায় যুক্ত ব্যক্তিদের।
এনডিটিভি-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে হাসনাইন বিষয়টিকে ‘প্রত্যাশার বাইরে’ বলে ব্যাখ্যা করে জানান যে, তিনি নিজেও ভাবেননি এত দ্রুত সাফল্য আসবে। তাঁর কথায়, “আমি ভেবেছিলাম সুড়ঙ্গের ভিতর দুই থেকে তিন মিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে তাঁদের (ইঁদুরের মতো গর্ত খননকারী) ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা সময় লাগবে। কিন্তু তাঁরা ১৮ ঘণ্টায় ১০ মিটার দূরত্ব পেরিয়েছেন।” ‘র্যাট-হোল মাইনিং’-এর যুক্ত প্রত্যেকের সাহস এবং অভিজ্ঞতার প্রশংসা করেছেন এনডিএমএ প্রধান।
বিভিন্ন খনি থেকে কাঁচামাল উত্তোলনের জন্য ‘ইঁদুরের গর্ত’ বা ‘র্যাট-হোল মাইনিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। বিশেষত কয়লা খনিতে এই প্রক্রিয়া খুবই পরিচিত। এর মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ শ্রমিকেরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে খনিতে নামেন। তাঁরা অল্প জায়গা নিয়ে সরু গর্ত খুঁড়তে খুঁড়তে এগিয়ে চলেন। ঠিক যেমন করে গর্ত খোঁড়ে ইঁদুর। প্রয়োজনীয় কয়লা তুলে আবার ওই একই পদ্ধতিতে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। আমেরিকান যন্ত্র বিকল হওয়ার পরে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে শ্রমিকদের বার করতে সেই মনুষ্য-নির্ভর এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল।
‘ইঁদুরের গর্ত খনন’-এর জন্য প্রথম দফায় ১২ জন বিশেষজ্ঞ খনিশ্রমিককে উদ্ধারস্থলে আনা হয়। তাঁরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে এগোন। সুড়ঙ্গের ভিতরে পৌঁছে এক জন দেওয়াল খুঁড়তে থাকেন। অন্য জন সেই ধ্বংসস্তূপ সংগ্রহ করেন এবং তৃতীয় জন তা চাকা লাগানো গাড়িতে তুলে দেন। সেই গাড়ি ধ্বংসস্তূপ বহন করে সুড়ঙ্গের বাইরে নিয়ে যায়। শেয পর্যন্ত সেই পদ্ধতিতেই আসে সাফল্য।
গত ১২ নভেম্বর ভোরে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে ধস নামে। ভিতরে আটকে পড়েন ৪১ জন শ্রমিক। এত দিন ধরে তাঁদের বার করার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছিল না কিছুতেই। খোঁড়ার সময়ে গত শুক্রবার বাধা আসে। ধ্বংসস্তূপের ভিতরের লোহার কাঠামোয় ধাক্কা খেয়ে ভেঙে যায় আমেরিকায় তৈরি খননযন্ত্র। উদ্ধারকাজ থমকে যায়। উদ্ধার করার আগে পর্যন্ত সুড়ঙ্গের শ্রমিকদের সঙ্গে প্রশাসনের তরফে অনবরত যোগাযোগ রাখা হয়েছিল। পাইপের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে কথা চলছিল। পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল খাবার, জল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।