National News

সুপ্রিম কোর্টকে তুলোধনা প্রাক্তন বিচারপতি শাহের

আজ ‘স্বাধীনতার জন্য লড়াই: একবিংশ শতাব্দীতে সুপ্রিম কোর্ট’ শীর্ষক বক্তৃতায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক যাবতীয় রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:০৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

গণতান্ত্রিক নেতারাই গণতন্ত্র ধ্বংস করেন। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকেই কাজে লাগানো হয়। ভারতেও সেই ধারা দেখা যাচ্ছে বলে জানালেন দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এ পি শাহ। তাঁর মতে— রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা নির্বাচন কমিশন, এর উদাহরণ। সিবিআই বা পুলিশকে বিরোধীদের হেনস্থা করার কাজে লাগানো হচ্ছে। বিদ্বেষমূলক মন্তব্য রুটিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিচারপতি শাহের মন্তব্য, শীর্ষ আদালতের দায়িত্ব সংবিধানকে রক্ষা করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হল, সুপ্রিম কোর্টের প্রাথমিক পদক্ষেপ খুবই রক্ষণশীল। সুপ্রিম কোর্ট এমন ভাবে আচরণ করছে, যাতে তাকে সরকারের থেকে আলাদা করা যাচ্ছে না।

Advertisement

আজ ‘স্বাধীনতার জন্য লড়াই: একবিংশ শতাব্দীতে সুপ্রিম কোর্ট’ শীর্ষক বক্তৃতায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক যাবতীয় রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি মনে করান, সুপ্রিম কোর্টের পরিচালনাতেই অসমে এনআরসি হয়। তাঁর যুক্তি, নাগরিকত্ব সব অধিকারের উপরে। অনুপ্রবেশের তত্ত্ব ভুল। অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত ১৯ লক্ষ মানুষের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই হিন্দু। অনেকেই আদিবাসী। মাত্র ৬ লক্ষ মুসলিম। শাহ বলেন, ‘‘অসমে আদালতই এনআরসি করিয়েছে। এখন আদালতে গিয়ে লাভ নেই। সে দরজা বন্ধ।’’ ডিটেনশন শিবির নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘বিচারপতি গগৈ প্রশ্ন করেছিলেন, ডিটেনশন শিবিরে কত জন রয়েছে? ৯০০ জন শুনে চটে গিয়ে বলেছিলেন, মাত্র ৯০০? মৌলিক অধিকারের জন্য আদালতের থেকে এ কথা শোনার পরেও বিশ্বাস করা যায়, এই আদালত অধিকারের জন্য?’’ প্রধান বিচারপতি গগৈয়ের আমলে সরকারের সুপ্রিম কোর্টকে মুখবন্ধ খামে তথ্য দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। নির্বাচনী বন্ড নিয়েও সুপ্রিম কোর্টের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আজ অযোধ্যা- রায় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে গগৈয়ের বেঞ্চের এই রায় কে লিখেছেন, তা রায়ে বলা হয়নি। তা নিয়ে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘রায়টা ইউনানিম্যাস ছিল, কিন্তু অ্যাননিমাস ছিল। আদালত কার্যত দোষীকেই পুরস্কৃত করেছে। মসজিদ ভাঙা দোষ হলে জমি কী করে হিন্দুদের কাছে যায়?’’ মুসলিমদের অযোধ্যা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ৫ একর জমি দেওয়াও ‘অপমানজনক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ রদের পর মানুষের স্বাভাবিক জীবনে বাধানিষেধ, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার বিষয়েও সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

Advertisement

আরও পড়ুন: অ্যাপ তৈরি করে সহপাঠীদের হাতে হেনস্থার জবাব খুদে ছাত্রীর

সিএএ-র বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের মামলা নিয়ে বর্তমান প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে বলেছিলেন, হিংসা বন্ধ হলেই তিনি মামলা শুনবেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহের কটাক্ষ, ‘‘যে ভাল আচরণ মৌলিক অধিকারের প্রাথমিক শর্ত।’’ তিনি বলেন, সংবিধানের প্রতি আনুগত্য রয়েছে কি না, আদালতের আত্মসমীক্ষা করা উচিত। প্রয়াত গাঁধীবাদী এল সি জৈনের এই স্মারক বক্তৃতায় হাজির ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারও বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট আমাদের অধিকার রক্ষা করতে পারবে কি না, তা আলোচনার বিষয়। সংবিধান কোনও নথি নয়। রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে চুক্তি।’’ গাঁধীবাদী জৈন বেঁচে থাকলে তিনি এখন মহিলা ও শিশুদের পাশে প্রতিবাদে শামিল হতেন বলেও মন্তব্য করেন রোমিলা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement