নগদের ‘ট্র্যাডিশন’ শুধু চলছে না, বাড়ছেও। ফাইল চিত্র।
এক সন্ধ্যায় রাতারাতি ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের পরে কেটে গিয়েছে ছয় বছর। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর আচমকা সেই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, দুর্নীতি এবং কালো টাকায় রাশ টানার উদ্দেশ্যেই তাঁর সরকারের এই পদক্ষেপ। কিন্তু ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কেরই সাম্প্রতিকতম তথ্য বলছে, এ দেশে মানুষের হাতে এই মুহূর্তে রেকর্ড পরিমাণ নগদ টাকা রয়েছে। নোট বাতিলের চার দিন আগে অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর ভারতে জনতার হাতে নগদ ছিল ১৭.৭ লক্ষ কোটি টাকা। আর এই বছরের গত ২১ অক্টোবরে তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০.৮৮ লক্ষ কোটি টাকা। ৬ বছরে হাতে নগদ বেড়েছে ৭১.৮৪ শতাংশ।
মোদী সরকারের নোট বাতিলের পদ্ধতি অবৈজ্ঞানিক বলে বার বারই অভিযোগ ওঠে। নোট বাতিলে অসংগঠিত ক্ষেত্র চরম ক্ষতির মুখে পড়লেও সরকার নিয়মিত ভাবে ডিজিটাল লেনদেনে জোর দিয়েছে। করোনা-কালে তা বেড়েছেও। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ‘‘ তথ্য বলছে, সার্বিক ভাবে অর্থনীতির অগ্রগতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অনুপাতে বাজারে নগদের ব্যবহারও বেড়েছে।’’ আরও বলা হয়েছে, কোনও নির্দিষ্ট সময়ে জিডিপির অনুপাতে ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবহার বৃদ্ধি মানেই নগদের ব্যবহারের অনুপাত নিজে থেকে হ্রাস নয়।
স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার অর্থনীতিবিদদের একটি সমীক্ষা সম্প্রতি জানিয়েছিল, এ বারের দীপাবলিতে বাজারে নগদের ব্যবহার ৭৬০০ কোটি টাকা কমেছে। কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং স্মার্টফোন-নির্ভর আর্থিক লেনদেনের জনপ্রিয়তার কথা উল্লেখ করেছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। তা সত্ত্বেও এত বছরে মোটের উপরে আমজনতার হাতে নগদের সঞ্চয় বেড়েছে। অনেকের মতে, একটি কারণ হল লকডাউন। ওই সময়ে সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় রসদ সঞ্চয় করে রাখার কথা ভেবেই বহু মানুষ নগদ টাকা হাতে রেখেছিলেন। দেশের প্রায় ১৫ কোটি মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। তাঁদের সঞ্চয় সেই নগদেই। সব মিলিয়ে নগদের ‘ট্র্যাডিশন’ শুধু চলছে না, বাড়ছেও।