অবস্থান স্পষ্ট করল না মোদী সরকার বা বিজেপি নেতৃত্ব। প্রতীকী ছবি।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ২৪ ঘণ্টা পরেও নরেন্দ্র মোদী সরকার বা বিজেপি নেতৃত্ব এ নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করল না।
কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী বা বিজেপি নেতাদের কেউই এ নিয়ে মুখ খোলেননি। নির্বাচন কমিশনও এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় খতিয়ে দেখে আইনি পরামর্শ নিয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের বদলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করবে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও লোকসভার বিরোধী দলনেতাকে নিয়ে তৈরি কমিটি। মোদী সরকার নির্বাচন কমিশনকে বশে রাখতে চাইছে বলে আগেই বিরোধীদের অভিযোগ ছিল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই কংগ্রেস দাবি তুলেছিল, বর্তমান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারেরা নিজেদের পদ থেকে ইস্তফা দিন। প্রয়োজনে তিন সদস্যের কমিটি ফের তাঁদের নিয়োগ করতে পারে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে তাঁদের সরে দাঁড়ানো উচিত।
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, তেমন কোনও নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট দেয়নি। সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করলেও কোনও ব্যক্তিবিশেষের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। ফলে নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগ করার প্রশ্ন আপাত ভাবে আসছে না। যখন নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের সময় আসবে, তখনই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের প্রশ্ন আসবে।
বর্তমান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের মেয়াদ ২০২৫ পর্যন্ত। তাঁর নজরদারিতেই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। অন্য দুই নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে, উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকারের মুখ্যসচিব হিসেবে কাজ করে আসা অনুপ চন্দ্র পাণ্ডের মেয়াদ ২০২৪-এর ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে। আর এক নির্বাচন কমিশনার অরুণ গয়াল কমিশনে থাকবেন ২০২৭ পর্যন্ত। গত নভেম্বরে গয়াল কেন্দ্রীয় সরকার থেকে স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার এক দিনের মধ্যে তাঁকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট একে ‘রহস্যময়’ বলে আখ্যা দিয়ে বলেছে, ‘‘উনি যেন স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার সময়ই জানতেন, ওঁকে নিয়োগ করা হতে চলেছে।’’ এখন ৬৫ বছর বয়স হলে নির্বাচন কমিশন থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনারদের জন্য ৬ বছরের মেয়াদের কথা বলেছে।
বিরোধী শিবিরের আশঙ্কা, মোদী সরকার আইন করে সুপ্রিম কোর্টের রায় নাকচ করে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এস ওয়াই কুরেশির মতো প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারেরা অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। বিজেপি নেতারা এখনও মুখ না খুললেও ঘরোয়া আলোচনায় তাঁরা অন্য প্রশ্ন তুলছেন। তা হল, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রধান বিচারপতি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটিতে ঢুকে পড়লেন। অথচ যখন জাতীয় বিচারপতি নিয়োগ কমিশন তৈরি করে বিচারপতি নিয়োগের কমিটিতে প্রধান বিচারপতি, দুই প্রবীণতম বিচারপতির সঙ্গে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীকে রাখার কথা বলা হয়েছিল, তখন সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দিয়েছিল! সরকারি সূত্রের বক্তব্য, বিচারপতি এম এন ভেঙ্কটাচালাইয়ার কমিটি ২০০২-এ নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে প্রধানমন্ত্রী, লোকসভা ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা, লোকসভার স্পিকার ও রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানকে নিয়ে কমিটির কথা বলেছিল। সেই কমিটিতেও প্রধান বিচারপতির থাকার কথা ছিল না।