বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ। মঙ্গলবার শ্রীনগরে। পিিটআই
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বাছাই করা সদস্যকে এনে কাশ্মীর সম্পর্কে ভাল ‘ছবি’ প্রচারের চেষ্টা করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু আজ সকালে সেই প্রতিনিধি দলের সফরের বিরুদ্ধে রাজ্যে দফায় দফায় বিক্ষোভ এবং পরে কুলগামে জঙ্গি হামলায় পাঁচ বাঙালি শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা উপত্যকার অন্য ছবিই দেখাল। প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামিকাল অনন্তনাগ ও কুপওয়ারায় যাওয়ার কথা ছিল ওই সদস্যদের। বিক্ষোভের জেরে সেই সফর বাতিল হয়েছে।
আজ সকাল থেকে শ্রীনগর, গান্ধেরবাল, বদগাম, বারামুলা, কুপওয়ারা, বান্দিপোরা, সোপোর, অনন্তনাগ, পুলওয়ামা, শোপিয়ান, কুলগামে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন ২৩টি এলাকায় বিক্ষোভকারী জনতার সঙ্গে বাহিনীর সংঘর্ষে কয়েক জন সামান্য আহত হন। পুলওয়ামার দ্রাবগামে একটি স্কুলের বাইরে দশম শ্রেণির পরীক্ষা চলাকালীন সিআরপিএফের মোবাইল বাঙ্কার লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে জঙ্গিরা। জওয়ানেরা পাল্টা গুলি ছুড়লেও হতাহতের খবর নেই। এর পরেই আসে বাঙালি শ্রমিকদের হত্যার খবর।
এ যাবৎ কেন্দ্র দাবি করেছে, পাকিস্তানের উস্কানি সত্ত্বেও কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ফলে উপত্যকার স্বাভাবিক ছবিটি আন্তর্জাতিক দলের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টার খামতি রাখেনি মোদী সরকার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখাতে দশম শ্রেণির পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয় বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। কিন্তু অন্যান্য দিন সকালে কিছু দোকান খোলা থাকলেও আজ বন্ধ ছিল সব দোকান। বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা জেলে। হরতালের ডাকও দেওয়া হয়নি। ইউরোপীয় সদস্যদের সফরের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই ব্যবসায়ীরা এ ভাবে দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। স্তব্ধ হয়ে যায় গণপরিবহণ ব্যবস্থাও।
এর মধ্যেই ইউরোপীয় সদস্যদের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সেনার ১৫ নম্বর কোরের সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের কাশ্মীর পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন সেনাকর্তারা। মধ্যাহ্নভোজের পরে ওই সদস্যেরা একটি পাঁচতারা হোটেলে বিজেপির যুব শাখার কয়েক জন নেতা এবং উপত্যকার কয়েক জন গ্রামপ্রধানের (পঞ্চ-সরপঞ্চ) সঙ্গে কথা বলেন। নাগরিক সমাজ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তাঁদের বৈঠকের কথা থাকলেও তা হয়েছে কি না, স্পষ্ট নয়। পরে ডাল লেকে শিকারায় বেড়াতে দেখা গিয়েছে ইউরোপীয় জনপ্রতিনিধিদের।
এ দিনই কাশ্মীর নিয়ে ফের মুখ খুলেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার হাইকমিশন। তাদের মুখপাত্র রুপার্ট কোলভিলের বক্তব্য, ‘‘কাশ্মীরের মানুষ এখনও অনেক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। ভারতের কাছে আমাদের অনুরোধ, নিষেধাজ্ঞা তুলে ওই মানবাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’’