India

ভারতের সঙ্গে ট্রেড টেকনিক্যাল কাউন্সিল গড়ার ঘোষণা ই ইউ-এর

রাশিয়া নিয়ে মতভেদের মধ্যেও ভারত-ই ইউ ট্রেড টেকনিক্যাল কাউন্সিল গড়ার ঘোষণা করেছেন উরসুলা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২২ ০৮:৪৭
Share:

রাজঘাটে মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর স্মৃতিস্থলে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লেয়েন। পিটিআই।

দুপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে সন্ধ্যায় রাইসিনা সংলাপের উদ্বোধনী বক্তৃতায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে একজোট হতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ডাক দিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ই ইউ)-এর প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লেয়েন। একই সঙ্গে চিনকেও নিশানায় এনে তাঁর বক্তব্য, ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার একতরফা আক্রমণের প্রভাব ভারত প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলেও পড়তে শুরু করেছে। তাঁর সাবধানবানী, এখনই সাবধান না হলে শুধু ইউরোপ নয়, মাসুল দিতে হবে এশিয়াকেও। তবে রাশিয়া নিয়ে মতভেদের মধ্যেও ভারত-ই ইউ ট্রেড টেকনিক্যাল কাউন্সিল গড়ার ঘোষণা করেছেন উরসুলা। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমানে কেবল আমেরিকার সঙ্গেই এই কাউন্সিল রয়েছে ইউরোপের।

Advertisement

বিদেশ মন্ত্রকের কূটনৈতিক উদ্যোগ রাইসিনা সংলাপের আন্তর্জাতিক মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে ই ইউ প্রেসিডেন্ট যে মস্কোর উপর খড়্গহস্ত হবেন এটাই প্রত্যাশিত ছিল বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভারতকেও বার্তা দিতে চাইলেন আজ উরসুলা। সূত্রের খবর, আজ দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এবং পরে তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতায় রাশিয়াকে কোণঠাসা করার কথাই বলেছেন তিনি। রবিবার নয়াদিল্লিতে আন্তর্জাতিক সৌরশক্তি সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় তাঁর আহ্বান ছিল, ইউক্রেন সংঘাতের পর প্রত্যেক দেশেরই উচিত রাশিয়ার থেকে জ্বালানি নির্ভরতা কমানো। আর বিকেলে উরসুলার বক্তব্য, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে করে রাশিয়ার এই আগ্রাসন আমাদের সমাজের প্রতি সরাসরি আঘাত। সে কারণেই আমরা ইউক্রেনকে যতটা পারি সাহায্য করছি। খুব কড়া এবং কার্যকরী অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞায় ফল হবে না। কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তাগত ব্যবস্থা সঙ্গে নেওয়া জরুরি।”

এর পরেই তিনি রাশিয়া-চিনের সাম্প্রতিক ঐক্যকে ব্যঙ্গ করে বলেন, “ফেব্রুয়ারিতেই রাশিয়া এবং চিন বৈঠক করে বলল সহযোগিতার প্রশ্নে তাদের কোনও সীমাবদ্ধতা নেই। আর তার পরেই আমরা দেখলাম রাশিয়ার তরফে এই আগ্রাসনের ঘটনা। ফলে আমরা এই বিশেষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটি থেকে কী আশা করতে পারি?”
সামনেই দর্শকাসনে বসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধানের আহ্বান, “এটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। এখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা আগামী দশককে গড়ে তুলবে। আমরা কি বেছে নেব? জঘন্য অমানবিকতা নাকি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি? আইনের শাসন নাকি শক্তির দর্প? ক্রমাগত সংঘর্ষ নাকি পারস্পরিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনা?”

Advertisement

অন্য দিকে আজ দুপুরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁরা উভয় পক্ষের কৌশলগত সম্পর্কের বিভিন্ন দিকগুলি খতিয়ে দেখেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ট্রেড টেকনিক্যাল কাউন্সিল গড়ার ঘোষণাও করেছেন উরসুলা। বর্তমানে একমাত্র আমেরিকার সঙ্গে এই কাউন্সিল রয়েছে ই ইউ-র। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং বিনিয়োগ চুক্তিগুলি নিয়ে ফের আলোচনা শুরু করা নিয়ে দুই নেতার কথা হয়েছে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং ভূকৌশলগত বিষয়গুলি নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুই নেতা।

রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর কৌশলগত ক্ষেত্রে মতাপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ভারত এবং ইউরোপের দেশগুলির। গত কাল সেই পার্থক্যকেই আবার খুঁচিয়ে সামনে নিয়ে এসেছেন উরসুলা। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যে রাশিয়া-নির্ভরতা কমানোর নিদান দেওয়া হয়েছে, তার মূলে গলদ রযেছে। সম্প্রতি আমেরিকায় গিয়ে ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর একাধিক বার সে কথা বলেছেন। ওয়াশংটনে দাঁড়িয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘ভারত গোটা মাসে যতটা জ্বালানি রাশিয়া থেকে আমদানি করে, ইউরোপ সেটা করে এক বিকেলেই!’ বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই ধরনের চাপের মুখে বার বার বলা হয়েছে, ভারত তার আমদানির মাত্র দু’শতাংশ অশোধিত তেল আনে রাশিয়া থেকে। যুদ্ধের সময়েও ইউরোপ রাশিয়ার তেল সংস্থাগুলির সঙ্গে আমদানি চুক্তি করেছে।

এই বিষয়গুলি বার বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমের চাপ যে কমবে না, তা ভাল করেই জানে সাউথ ব্লক। কিন্তু সেই মতবিরোধকে সরিয়ে রেখে যে ভাবে আমেরিকার সঙ্গে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সহযোগিতা ও মতৈক্যকে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, উরসুলার এই সফরকে সে ভাবেই কাজে লাগাতে চাওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী আজ উরসুলার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সহযোগিতার দিকটিতে গুরুত্ব দিয়েছেন।

আজ তাঁর বক্তৃতায় উরসুলা বলেছেন, “একটা কথা সবার মাথায় রাখা দরকার যে এই যুদ্ধের ফলে শুধু ইউরোপের দেশগুলিরই নয়, ক্ষতি হবে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেরও। আমরা মনে করি প্রত্যেকটি দেশের সীমান্তকে সম্মান করা উচিত। গোটা বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যার বসবাস এই অঞ্চলে। বিশ্বের গড়অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৬০ শতাংশ আসে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement