শান্তিরক্ষায় তাঁর হাতিয়ার জনসংযোগই

এটাওয়াতে কিন্তু একটি অশান্তির ঘটনাও ঘটেনি। কাউকে গ্রেফতার করতে হয়নি পুলিশকে। তার পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছে সন্তোষকুমারের ফর্মুলা।

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২১
Share:

মাইক হাতে এটাওয়ার এসএসপি সন্তোষকুমার মিশ্র। সঙ্গী দুই সাব-ইনস্পেক্টর মহম্মদ শাকিল (হেলমেট মাথায়) ও মহম্মদ ইমরান। ছবি এসএসপি মিশ্রের সৌজন্যে পাওয়া।

বাহিনী প্রস্তুত। রুট মার্চ চলছে। তার মাঝেই সঙ্গী দুই সাব-ইনস্পেক্টর মহম্মদ শাকিল এবং মহম্মদ ইমরানকে নিয়ে সংখ্যালঘু কিশোর-যুবকদের কাছে কিছুটা এগিয়ে গেলেন এটাওয়া-র এসএসপি সন্তোষকুমার মিশ্র। নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় পথে নামা বিক্ষোভকারীদের কাছে শাকিল এবং ইমরানকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে সন্তোষকুমার বললেন, ‘‘আপনারা প্রতিবাদ করছেন, করুন। সঙ্গে এও মনে রাখুন শাকিল, ইমরানেরা তাঁদের কর্তব্য পালন করছেন। ওঁরা সকলের ভবিষ্যত।’’

Advertisement

নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় অগ্নিগর্ভ উত্তরপ্রদেশ। এটাওয়াতে কিন্তু একটি অশান্তির ঘটনাও ঘটেনি। কাউকে গ্রেফতার করতে হয়নি পুলিশকে। তার পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছে সন্তোষকুমারের ফর্মুলা।

কী সেটা? ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে কমিউনিকেশন কাউন্সেলিংই পথ। আমি বিশ্বাস করি, কিশোর-যুবকেরা জাতির প্রাণস্পন্দন। আমি তাদের কথা বলি। সংযোগ রাখি।’’ যে কোনও বড় ঘটনা বা উৎসবে রাস্তায় রুটমার্চের মাঝেই মানুষের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন তিনি। ফোনে আনন্দবাজারকে জানালেন ২০১২ সালের এই আইপিএস। সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘আমজনতার মনে অনুযোগ, সংশয়, প্রশ্ন রয়েছে। সেই প্রশ্নের জবাব দেওয়াও আমার কর্তব্য।’’

Advertisement

সম্প্রতি নাগরিকত্ব নিয়ে সংখ্যালঘু কিশোর এবং প্রবীণদের সঙ্গে সন্তোষকুমারের কথোপকথনের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সেখানে এক কিশোরকে এসএসপি বলছেন, ‘‘এখানে থেকেই (এটাওয়াতে থাকা) পড়াশুনো করতে হবে। স্কুল যেতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। পুলিশের চাকরি করতে হবে। এখানে যারা থাকে, তাদের সঙ্গে এই নাগরিকত্ব আইনের কোনও সম্পর্ক নেই। এই আইনটি ভারতের বাইরে থেকে যারা এসেছেন, তাঁদের জন্য।’’

প্রাক্তন সেনা অফিসারের ছেলে সন্তোষকুমার ২০০৪ সালে পুণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ইউরোপে চলে গিয়েছিলেন। দেশসেবা করবেন বলে মোটা অঙ্কের বেতন ছে়ড়ে ফিরে এলেন। ২০১১ সালে প্রথম বারই আইপিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।

এটাওয়া শান্ত রাখার জন্য দু’টি পন্থা নিয়েছিলেন ৩৮ বছর বয়সি সন্তোষকুমার। ফোনে বলছিলেন, ‘‘কখন পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে যাবে জানতাম না। তাই সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই আমরা রাস্তায় ছিলাম।’’ সেই সঙ্গে ‘‘একের পর এক মসজিদে গিয়েছি। সংখ্যালঘু এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের বুঝিয়েছি গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদ করুন। গোলমাল করলে অপ্রয়োজনে আপনারাই বিভিন্ন সমস্যায় পড়বেন। স্মারকলিপি যাঁর উদ্দেশে (রাষ্ট্রপতি বা সংসদ) দিতে হয়, দিন। আমরা স্মারকলিপি নিয়েছি। যথাস্থানে তা পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে।’’

নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশের বিরুদ্ধে মারমুখী হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই প্রশ্নের জবাবে সন্তোষকুমারের বক্তব্য, ‘‘কোথায় কী হচ্ছে তা নিয়ে মন্তব্য করব না। সাংবাদিক, পুলিশ— সকলেই তাঁর মতো করে পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের লড়াই লড়ছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement