Kerala Landslide

খোঁড়া হচ্ছে একের পর এক কবর, তবু স্বজনের কান্না নেই মেপ্পাড়ি মসজিদের কবরস্থানে, স্বজনই যে বেঁচে নেই!

মেপ্পাড়ির জুমা মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে দীর্ঘ হচ্ছে মৃতদেহের লাইন। মসজিদ কমিটির প্রধান জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ৩০ জনের দেহের সৎকার করা হয়েছে। তবু কবর খননের কাজ থামেনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৪ ১৭:৫৭
Share:

ওয়েনাড়ে একই পরিবারের তিন জনের দেহ রাখা রয়েছে শেষকৃত্য়ের জন্য। ছবি: এএফপি।

সকাল হতেই আনাগোনা শুরু হয়েছে অ্যাম্বুল্যান্সের। একের পর এক দেহ নামিয়ে রেখে আবার ছুটছে দেহ আনতে। সার দিয়ে রাখা সেই দেহ সমাধিস্থ করার জন্য যন্ত্রের মতো মাটি খুঁড়ে চলেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। তার পর রীতি মেনে সৎকার করে চলেছেন। তবে কোনও স্বজনের কান্না নেই ওয়েনাড়ের মেপ্পাড়ির জুমা মসজিদ কবরস্থানে। কারণ, যাঁদের কবর দেওয়া হচ্ছে, বেশির ভাগেরই কোনও স্বজন আর বেঁচে নেই। তাঁদেরও গিলে খেয়েছে ধস। যাঁরা বেঁচে রয়েছেন, তাঁরা হাসপাতালের শয্যায়।

Advertisement

মঙ্গলবার ভোরে ধস নেমে কাদায় মিশে গিয়েছে ওয়েনাড়ের একাধিক গ্রাম। এখন পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ২৭৬ জন। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারকাজ চলছে এখনও। কাদামাটি সরালেই উঠে আসছে দেহ। সেই দেহ শনাক্ত করার পর পাঠানো হচ্ছে শেষকৃত্যের জন্য। মেপ্পাড়ির জুমা মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে দীর্ঘ হচ্ছে মৃতদেহের লাইন। মসজিদ কমিটির প্রধান জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ৩০ জনের দেহের সৎকার করা হয়েছে। তবু কবর খননের কাজ থামেনি।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মেপ্পাড়ির এই কবরস্থানে বেশির ভাগ দেহ আসছে চুরালমালা এবং মুন্ডাক্কাই থেকে। উদ্ধারকারীরা জানাচ্ছেন, সেখানে এক একটি গোটা পরিবার, কোথাও আবার গোটা পাড়া মাটির নীচে। বেশির ভাগ বাসিন্দার জন্য শোক করার মতো কেউ বেঁচে নেই। এর মধ্যে মুন্ডাক্কাইতে আবার মসজিদই চাপা পড়েছে ধসে। মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানটিরও আর অস্তিত্ব নেই। তাই সেখানে মৃত মুসলিমদের দেহ এখন মেপ্পাড়ির কবরস্থানে নিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।

Advertisement

মেপ্পাড়ির জুমা মসজিদ কমিটির সহসভাপতি মুস্তাফা মৌলবি জানিয়েছেন, ৩০ জনকে ইতিমধ্যে কবরস্থ করা হয়েছে। আরও ৫০টি কবর খনন করা হচ্ছে। এক এক পরিবারের সকল সদস্যদের একটি কবর খনন করা হচ্ছে। যাঁদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজ মেলেনি, তাঁদের কবরের পাশে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। নিয়ম মেনে শেষকৃত্য করছেন তাঁদের। মুস্তাফার কথায়, ‘‘কখনও কখনও একটা গোটা পরিবারকেই অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে কবরস্থানে। একের পর এক দেহ এসেই চলেছে। কারও কবরে মাটি দিচ্ছেন অনেক দূরের কোনও আত্মীয়।’’

যাঁদের জন্য দু’ফোঁটা চোখের জল ফেলার জন্যও কেউ বেঁচে নেই, তাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরাও। দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে আত্মীয়ের মতোই পালন করছেন রীতি। তার পর সমাধিস্থ করছেন। সেই স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে এক জন মনফও। তিনি বলেন, ‘‘অনাথের মতো এই মানুষগুলিকে তো ছেড়ে যেতে পারি না। ওঁদের শেষযাত্রায় আত্মীয়ের ভূমিকাই পালন করছি।’’ আরও কত কবর যে খুঁড়তে হবে, এখন সেই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে যুবককে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement