গণপিটুনি ও ধর্মের নামে উন্মাদনার প্রতিবাদ করে বিদ্বজ্জনদের চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি এখন ‘উস্কানিমূলক রণহুঙ্কার’ হয়ে উঠেছে বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লেখা খোলা চিঠিতে আক্ষেপ করলেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের একাংশ।
২০১৪-য় মোদী-জমানা শুরুর পর থেকে দলিত-সংখ্যালঘুদের উপরে ঘৃণাপ্রসূত হিংসার ঘটনা বেড়েছে বলে সরব আদুর গোপালকৃষ্ণন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শ্যাম বেনেগাল, রামচন্দ্র গুহ, বিনায়ক সেন, মণিরত্নম, অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষ, শুভা মুদ্গল, অনুরাগ কাশ্যপ, কৌশিক সেন, কঙ্কনা সেনশর্মা, রূপম ইসলাম প্রমুখ বিভিন্ন ক্ষেত্রের যশস্বীরা। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠাবশত লেখা চিঠিতে, গণপিটুনির প্রতিবিধানে কেন্দ্রের ব্যর্থতা নিয়েও বিঁধেছেন তাঁরা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘দুঃখজনক ভাবে 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি এখন উস্কানিমূলক রণহুঙ্কার হয়ে উঠেছে। যার ফলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হচ্ছে। একাধিক গণহত্যাও ঘটছে। ধর্মের নামে এত হিংসা অবিশ্বাস্য! এটা মধ্যযুগ নয়! দেশের সংখ্যাগুরু সমাজের অনেকের কাছেই রামের নাম অতি পবিত্র। শীর্ষ স্তরের প্রশাসক হিসেবে, রামের নামে কালি ছিটানো প্রতিরোধের দায়টা কিন্তু আপনারই (প্রধানমন্ত্রীর)!’’
সিটিজেনস্পিকইন্ডিয়া’ নামের একটি মঞ্চের ইমেল আইডি থেকে মঙ্গলবার রাতেই চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়। ‘জয় শ্রীরাম’ এখন প্রহারের মন্ত্র বলে সম্প্রতি হিন্দুত্ববাদীদের বিরাগভাজন হয়েছেন অমর্ত্য সেন। এ বার বিশিষ্টজনেরাও অনেকে তাঁর সুরেই গলা মেলালেন।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, শুধু ২০১৬ সালেই দলিত-বিরোধী হিংসার ৮৪০টি ঘটনা ঘটেছে। বিচারের সংখ্যাও কম। ২০০৯ থেকে ২০১৮-এ ২৫৪টি ধর্মীয় হিংসার ঘটনায় নিহত ৯১ জন, ৫৭৯ জন জখম হয়েছেন। ৬২ শতাংশ ক্ষেত্রে মুসলিমেরা আক্রান্ত হয়েছেন, ১৪ শতাংশ ক্ষেত্রে খ্রিস্টানেরা হামলার শিকার। ৯০ শতাংশ হামলাই মোদী-জমানা শুরুর পরে ঘটেছে বলেও চিঠিটিতে দাবি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এর আগে এমন গণপিটুনির নিন্দা করলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন চিঠির প্রেরকেরা। ‘‘সাধারণ খুনের থেকেও গণপিটুনির ঘটনা আরও নৃশংস। খুনের আসামির মতো গণপিটুনির দোষীদেরও প্যারোলবিহীন যাবজ্জীবন কারাবাসই প্রাপ্য। নিজের দেশেই কোনও নাগরিককেই যেন ভয়ে ভয়ে থাকতে না-হয়!’’ সেই সঙ্গে সরকার-বিরোধী স্বরকে দেশ-বিরোধী বলে দাগিয়ে ‘শহুরে নকশাল’-এর মতো তকমা আরোপেরও নিন্দা করা হয়েছে।
এই চিঠির জবাবে কেন্দ্রের তরফে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভিই মুখ খুলেছেন। ‘‘অপরাধকে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়া ঠিক নয়! এ দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ’’— এ কথা বলে এই চিঠি মোদী-জমানার প্রথম পর্বে বিশিষ্টদের পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার দ্বিতীয় পর্ব বলে কটাক্ষ করেন নকভি।
প্রত্যাশিত ভাবেই এই চিঠির যৌক্তিকতা সমর্থন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর কোনও ধর্মীয় স্লোগানে আপত্তি নেই। তিনি শুধু ধর্মীয় হিংসার বিরুদ্ধে। ধর্মের নামে খুন বন্ধ করতে তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহানও এ দিনই নয়া আইনের দাবি জানিয়েছেন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।