প্রতীকী ছবি।
পাচারকারীদের হাত থেকে দুই নাতনিকে বাঁচিয়ে হাজতবাস করছেন দিদিমা। মাকে জেল থেকে বার করতে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন মেয়ে। তাঁর আবেদন, হরিয়ানা রেওয়াড়ি আদালতে জামিনের টাকা মিটিয়ে মাকে ছাড়িয়ে আনতে জেলা, রাজ্য বা জাতীয় আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হোক।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের বাসিন্দা কমলা হালদারের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মমতা মণ্ডল। ছোট মেয়ের নাম রুমা নস্কর। মামলার আবেদনকারী রুমার আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ রায়চৌধুরী জানান, মমতার প্রথম পক্ষের স্বামী বহুকাল নিখোঁজ। মমতার দুই মেয়ে। বছর কয়েক আগে মমতা বিয়ে করেন, নিজের নাম বদলে করেন বাবলি খান। ২০১৮ সালে বাবলি স্বামীর সঙ্গে হরিয়ানা চলে যান।
আইনজীবী জানান, দুই নাতনিকে মানুষ করতে থাকেন কমলা। তাদের একটি আবাসিক স্কুলে ভর্তি করান। বড় নাতনি ভাল বাস্কেটবল খেলে। জাতীয় স্তরে খেলার সুযোগ পায় সে। ওই সুযোগ পেতে তার জন্মের শংসাপত্রের প্রত্যয়িত কপি দেখানো বাধ্যতামূলক হয়। দেখা যায়, দুই মেয়ের জন্মের শংসাপত্র নিয়ে বাবলি হরিয়ানা চলে গিয়েছেন। সেই শংসাপত্র আনতে দুই নাতনিকে নিয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে হরিয়ানা যান কমলা।
আইনজীবী জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের কাছে কমলা গত বছর অভিযোগ জানান, হরিয়ানা গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর দুই নাতনিকে পাচারের চেষ্টা করছে বাবলি ও তার স্বামী। ছোট নাতনিকে নিয়ে তিনি পালিয়ে আসতে পারলেও বড় মেয়েকে আটকে রেখেছে তার সৎ বাবা। জেলা পুলিশ তাঁর অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, এই অভিযোগে গত বছর হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি মনোজিৎ মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেন কমলা। ডিভিশন বেঞ্চ বারুইপুরের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়, বড় নাতনিকে উদ্ধার করে দিদিমার হাতে তুলে দিতে। ওই নির্দেশ মানেন পুলিশ সুপার।
ইন্দ্রজিৎ জানান, ডিভিশন বেঞ্চে মামলা চলাকালীন হরিয়ানার থারুহেরা থানার পুলিশ দুই নাবালিকাকে অপহরণ করে পাচারের চেষ্টার খবর পায়। সেখানকার পুলিশ বাবলি ও তার স্বামীকে গ্রেফতার করে। রেওয়াড়ি আদালতের নির্দেশে তারা এখন জেলে। ওই আদালত সাক্ষ্য দিতে গত বছর অগস্ট ও সেপ্টেম্বরে কমলাকে সমন পাঠায়। আইনজীবী জানান, পাচারকারীদের ভয়ে সেখানে যাননি কমলা। তার জেরে আদালত কমলার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। মাস চারেক আগে থারুহেরা থানার পুলিশ জয়নগর থেকে কমলাকে গ্রেফতার করে রেওয়াড়ি আদালতে হাজির করায়। আদালত তাঁর সাক্ষ্যগ্রহণ করলেও জামিনদারের অভাবে জামিন হয়নি। কমলার কাছে জামিন নেওয়ার মতো টাকাও ছিল না। ফলে চার মাস ধরে তিনি সেখানকার জেলেই রয়েছেন।
মাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনতে মেয়ে রুমা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দ্বারস্থ হন। জেলা, রাজ্য ও জাতীয় আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষকে কমলার জামিনের ব্যবস্থা করতে চিঠি লিখে অনুরোধ জানায় ওই সংগঠন। তাদের কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে হাইকোর্টে গিয়েছেন ছোট মেয়ে। নাতনিদের দেখভাল করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং ওই সংস্থা।